স্বাধীনতা মানবজীবনে মহান
আল্লাহর অপূর্ব
দান। আল্লাহ
মানুষকে চিন্তার স্বাধীনতা, সুন্দর
জীবন
গড়ার
স্বাধীনতা, উপার্জন করে
জীবিকা
নির্বাহের স্বাধীনতা, পড়ালেখা করার
স্বাধীনতা, পছন্দ
অনুযায়ী চলাফেরার স্বাধীনতা, খাওয়া-দাওয়ার স্বাধীনতা, বন্ধু
নির্বাচন ও
বর্জনের স্বাধীনতা, সর্বোপরি নিজ
মাতৃভূমিকে পরাধীন
রাখা
কিংবা
শত্রুমুক্ত করার
স্বাধীনতা দিয়েছেন। এ স্বাধীনতা খর্ব
করার
অধিকার
কারো
নেই। এ
অধিকার
খর্ব
করা
যেমন
মানবাধিকার পরিপন্থী; তেমনি
মহান
আল্লাহর আইনের
বিরোধীও বটে। তবে
স্বাধীনতার অর্থ
এই
নয়
যে,
স্বাধীনতার সুযোগ
নিয়ে
ব্যক্তি, সমাজ
বা
রাষ্ট্র স্বেচ্ছাচারী হয়ে
উঠবে। ইসলাম
কোনো
অবস্থাতেই স্বেচ্ছাচারিতা ও
স্বৈরমানসিকতাকে সমর্থন
করে
না।
মানুষ সৃষ্টির সেরা বলে স্বাভাবিক এবং সঙ্গত কারণেই স্বাধীনচেতা। মহান আল্লাহ মানবজাতিকে সহজাত এমন প্রকৃতি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, সে নিরঙ্কুশ কোনো সত্তার কাছে ছাড়া কারো কাছে নতি স্বীকার করতে চায় না। ইসলাম সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক প্রভৃতি ক্ষেত্রে পরাধীনতাকে যেমন সমর্থন করে না; তেমনি মাতৃভূমির পরাধীনতাকেও পছন্দ করে না। বলা হয়েছে, ‘স্বদেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ’। এ বাণী থেকেই অনুধাবন করা যায়, দেশের প্রতি আত্মিক প্রেরণা ও ভালোবাসাকে ইসলাম কতটা ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে। দেশের প্রতি যার অন্তরে ভালোবাসা বিদ্যমান, দেশের মঙ্গল কামনা ও মঙ্গলসাধন তার সহজাত বিষয়। দেশ তার একজন সন্তান ও নাগরিকের কাছে এই মঙ্গল কামনা, এই কল্যাণসাধন ও ত্যাগের মহিমা প্রত্যাশা করে।
ইসলাম মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জোরালো তাগিদ দিয়েছে। ইসলাম শুধু অনুকূল পরিবেশেই নয়, প্রতিকূল পরিবেশেও স্বাধীনতা রক্ষায় গুরুত্বারোপ করেছে। চরম প্রতিকূল পরিবেশে মহানবী সা: যখন নিজ মাতৃভূমি মক্কা ত্যাগ করে মদিনায় হিজরত করে যাচ্ছিলেন তখন তিনি বারবার মক্কার প্রান্তর, পাহাড়, বৃক্ষের দিকে তাকিয়ে অশ্র“সজল চোখে বলছিলেন- ‘হে মক্কা! আমি তোমায় ভালোবাসি।’ দশ বছর পর যখন বিনাযুদ্ধে মহানবী সা: বিজয়ীর বেশে মক্কায় প্রবেশ করেন তখনো তাঁর কোমল হৃদয়ে স্বদেশ ও স্বদেশবাসীর প্রতি আকর্ষণ ছিল বর্ণনাতীত। তিনি প্রতিশোধের পরিবর্তে দৃঢ়কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘আজ তোমাদের প্রতি কোনো প্রতিশোধ নেই।’ মহানবী সা:-এর দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সাহাবিরাও দেশকে ভালোবাসতেন মন উজাড় করে।
আদিকাল থেকেই মানুষ স্বাধীন জাতিসত্তা হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করে আসছে। মানবতার ধর্ম ইসলামও এ বিষয়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে। আইয়ামে জাহেলিয়ার সময় ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতি চালু থাকলেও ইসলাম পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্রে স্বাধীনচেতা মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যেতে উৎসাহিত করেছে। তবে বিচ্ছিন্নভাবে ও অনৈতিক উপায়ে আধিপত্য বিস্তারের নীতিকে ইসলাম যেমন সমর্থন করে না, তেমনি কারো স্বাধীনতার অধিকার খর্ব করাকে বৈধ মনে করে না। বরং নিজ নিজ অধিকার রক্ষায় সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করার কথা বলেছে ইসলাম।
ইসলাম মানুষকে দেশপ্রেম ও স্বদেশ চেতনায় অনুপ্রাণিত করে। স্বাধীনতা অর্জনে প্রয়োজনে জীবন বিলিয়ে দিতে সাহস জোগায়। স্বাধীনতা সুরক্ষায় দেশকে ভালোবেসে অতন্দ্রপ্রহরী হিসেবে কাজ করতে উৎসাহিত করে। মহানবী সা: বলেছেন, ‘দেশ রক্ষার জন্য সীমান্ত পাহারায় আল্লাহর রাস্তায় বিনিদ্র রজনী যাপন করা দুনিয়া ও এর মধ্যকার সব কিছু থেকে উত্তম।’ (তিরমিজি)।
ইসলাম স্বাধীনতায় বিশ্বাসী হলেও সে স্বাধীনতা বল্গাহীন স্বাধীনতা নয়। সে স্বাধীনতা কিছু বিধিনিষেধ দ্বারা সুনিয়ন্ত্রিত। ইসলামে স্বাধীনতা হচ্ছে নিজেকে আল্লাহর কাছে অত্মসমর্úণ করে তারই নির্দেশ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা। আল্লাহ বলছেন, ‘বলো- আমার সালাত, আমার ইবাদত, আমার জীবন ও আমার মরণ জগতের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশে।’ (সূরা আনয়াম : ১৬২)। ইসলাম মানুষকে রাজনীতি করার অধিকার দিয়েছে, কিন্তু স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বৈরতান্ত্রিকতাকে মোটেও প্রশ্রয় দেয়নি। দলের ঊর্ধ্বে উঠে ছোট-বড়, ধনী-নির্ধন, সবল-দুর্বল সবার প্রতি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। আল্লাহ বলেন, ‘আমি তো তোমার প্রতি সত্যসহ কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যাতে তুমি আল্লাহ তোমাকে যা জানিয়েছেন সে অনুসারে মানুষের মধ্যে বিচার মীমাংসা করো।’ (সূরা নিসা : ১০৫)।
ইসলাম শোষণমুক্তির কথা বলে। মানুষের দায়বদ্ধতা থেকে মুক্ত হয়ে মানুষকে আল্লাহর কাছে সমর্পিত হতে শিক্ষা দেয়। কাজেই মুসলমানের প্রকৃত মুক্তি ও সফলতা হলো পরকালীন মুক্তি ও সাফল্য। মূলত আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্য না হওয়া পর্যন্ত যেকোনো কাজ করার স্বাধীনতা মুসলমানের রয়েছে।
ইসলাম স্বাধীনতা ও দেশপ্রেমের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে। বস্তুত দেশপ্রেম ও জাতিপ্রেমের কোনো বিকল্প নেই। দেশের প্রচলিত বিধান (ইসলামবিরোধী নয় এমন) মেনে চলা, দেশীয় পণ্যকে প্রাধান্য দেয়া, জাতীয় সম্পদের সুরক্ষা, অপচয় রোধ, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ে তোলা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা ইত্যাদি বিষয় হলো দেশপ্রেমের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
এসব বিষয়ের প্রতি প্রত্যেক নাগরিককে যেমন সজাগ থাকতে হবে, তেমনি শাসকদেরও এর প্রতি যত্নশীল হতে হবে। ইসলাম ধর্মে স্বাধীনতা মূলত তখনই অর্থবহ হবে যখন প্রতিটি ক্ষেত্র থেকেই দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, আত্মীয়করণ, লুটপাট, ক্ষমতার অপব্যবহার, আইনের অপপ্রয়োগ, জবরদখল, সুদ, ঘুষ, ঋণখেলাপি, জেনা-ব্যভিচার, হত্যা, গুম ইত্যাদি অপশাসন থেকে মুক্ত হবে।
ইসলাম শান্তির ধর্ম। দেশের জনসাধারণ শান্তিতে বাস করবে, এটাই ইসলাম শিক্ষা দিয়েছে আমাদের। প্রত্যেক নাগরিকের নৈতিক দায়িত্ব হচ্ছে প্রতিটি অপশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। সরকারের দায়িত্ব হবে কোনোভাবেই যেন অপশাসন মাথচাড়া দিয়ে না ওঠে, এ বিষয়টি সুনিশ্চিত করা। এবারের স্বাধীনতা দিবসে এটাই হোক আমাদের প্রত্যাশা।
Info:
http://www.dailynayadiganta.com
No comments:
Post a Comment