বিশ্বকাপ ফাইনাল। শেষ
ওভারে প্রয়োজন ১৯ রান।
ব্যাট হাতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের
আনকোরা এক তরুণ।
সম্ভাবনার পালে হাওয়া ছিল
না খুব, তবু কার্লোস
ব্রাথওয়েট ঠিকই ক্যারিবীয় রূপকথা
লেখেন টানা ৪ ছক্কায়। সেই
শেষ ওভার নিয়েই ক্রিকেট
ওয়েবসাইট ক্রিকইনফোর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাত্কার। ক্রিস
জর্ডানের পরিকল্পনা আমরা খুব ভালোভাবে
জানতাম। ও
খুব ভালো ইয়র্কার দিতে
পারে।
ওভারজুড়ে
সে চেষ্টা করছিল।
আমি চাইছিলাম একস্ট্রা কাভার কিংবা মিড
অফের ওপর দিয়ে তুলে
বাউন্ডারি মারতে, যেন মারলন
স্যামুয়েলসের ওপর চাপ কিছুটা
কমে। সেটি
আর হচ্ছিল না।
আর ওভারের শেষ বলে
চাইছিলাম, মারলন যেন ওর
কাজটি ঠিকঠাক করতে পারে। তাহলে
শেষ ওভারটি কিছুটা সহজ
হবে। কিন্তু
দুর্দান্ত এক ইয়র্কার করল
ক্রিস।ওভার
শুরুর আগে মারলন এসে
আমাকে বলল, ‘যা-ই
হোক না কেন, আমি
দৌড়াব। ব্যাটের
সুইং এমনভাবে করো, যেন বল
পাহাড়ের দিকে চলে যায়।’ শেষ
ওভারে প্রথম বল ছিল
কিছুটা লেগ সাইডে।
আমি সেটি কেবল তুলে
দিই। এরপর
একটু খেপাটে হয়ে দেখতে
থাকি, বলটি কি মাঠের
যেদিকের বাউন্ডারি বড়, সেদিকে চলে
গেল কি না।
ভাগ্য ভালো, ছোট বাউন্ডারির
ফাইন লেগের দিকে যায়
তা। মারলন
তখন দৌড়াচ্ছিল আর আমি জানতাম,
আরো অনেক কাজ বাকি
রয়েছে।এটি
উড়ে যায় লং অনের
ওপর দিয়ে। বেন
স্টোকসের বলের লাইন লেন্থ
ততক্ষণে এলোমেলো। একটু
নিচু হয়ে বলের নিচে
গিয়ে ব্যাট চালিয়ে দিই। যখন
দেখলাম সেটি ছক্কা হয়ে
গেল, উচ্ছ্বাসের অনুভূতি হলো আরেকটু।
কেননা আমরা জয়ের আরেকটু
কাছাকাছি পৌঁছাই। যদিও
তখনো নিশ্চিত হওয়ার উপায় ছিল
না। তখন
চার বলে প্রয়োজন ৭
রান। মারলন আবারও বলল,
ব্যাটে বল লাগলেই আমরা
দৌড়াব। এটিও ছিল এক
রকম মিস-হিট, তবে
লং অফের ওপর দিয়ে
তুলে দিতে পারি। তখনই
জেনে যাই, ওয়েস্ট ইন্ডিজ
বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হচ্ছে। তবে আমি
বেশি দূর ভাবতে চাইনি।
১ রান তখনো প্রয়োজন।
সেই বলেও আমাকে উড়িয়ে
মারতে হতো, কেননা ফিল্ডাররা
কাছাকাছি চলে এসেছে। জানতাম,
যদি বলকে ফিল্ডারদের ছাড়িয়ে
দিতে পারি, আমরা বিশ্ব
চ্যাম্পিয়ন। বলটি ভালোভাবে দেখলাম,
ব্যাটের সঙ্গে সংযোগ হলো
ভালোভাবে। সেটি যে ছক্কা
হলো, আমি জানতাম না।
অন্যরা যখন বলল যে
টানা ৪ ছক্কা বিস্ময়কর
ব্যাপার, তখনই বুঝলাম। ওই
মুহূর্তে কেবল জানতাম, বল
মিড অনের ওপর দিয়ে
গেছে, আমরা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন...ব্যস, এটুকুই। সেই
অনুভূতি বোঝানোর মতো না। ফাইনালের শেষ ওভারে বেশি
কিছু ভাবা কঠিন। তবে
৩ বলে ৩ ছক্কা
মারার পর যখন ৩
বলে ১ রান প্রয়োজন—কাজটি করার জন্য
খুব বেশি সময় নিতে
চাইনি। ওই সময় ১
রানের চেষ্টা হয়তো করা
যেত। তখন কারো রান
আউট হওয়ার আশঙ্কা ছিল,
পরের বলটি হয়তো ভালো
হলো খুব। হঠাৎ দেখা
গেল, আমাদের সুপার ওভার
খেলতে হচ্ছে। এ কারণে
আমি চেয়েছি, বলটিকে সার্কেলের ভেতর
থাকা ফিল্ডারদের ওপর দিয়ে উড়িয়ে
দিতে। সেটি তো শেষে
ছক্কাই হয়ে গেল। তৃতীয়টি মিস-হিট হয়েছে।
কিন্তু ৬৫ মিটার ছক্কা
কিংবা ৯৪ মিটার ছক্কা—শেষ পর্যন্ত সবই
তো ৬ রান। নিজের যোগ্যতাতেই স্টোকস
একজন কিংবদন্তি। গত কয়েক মাসে
ইংল্যান্ডের হয়ে ওর কীর্তিগুলো
ভুলে গেলে চলবে না।
ক্রিকেট নিষ্ঠুর এক খেলা, এখন
অনেকেই স্টোকসের ওপর চড়াও হতে
পারে। কিন্তু মনে রাখবেন,
যুবরাজ সিংও স্টুয়ার্ট ব্রডের
ওভারে ৬ ছক্কা মেরেছিল।
এর পর থেকে ব্রডের
ক্যারিয়ার ওপরের দিকেই উঠেছে।
বেনের প্রতি বলছি, ওই
রাতটি তোমার জন্য খুব
কঠিন ছিল; তোমার ও
ইংল্যান্ড দলের প্রতি তাই
রইল সহানুভূতি। আশা করছি, দীর্ঘ
ও সফল এক ক্যারিয়ার
বেনের সামনে পড়ে রয়েছে।
Info : http://www.kalerkantho.com
No comments:
Post a Comment