রুপলাল
হাউস
এই
বাংলার
এক
গৌরব
ও
ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা। বর্তমানে ঢাকার
সূত্রাপুর থানার
ফরাশগঞ্জে অবস্থিত রুপলাল
হাউসের
সঙ্গে
প্রাচীন বাংলার
অনেক
ইতিহাস
জড়িত। সংস্কারের অভাব,
দখল
ও
অবহেলায় বর্তমানে হারিয়ে
যাওয়ার
পথে
দুশ’
বছরের
এই
ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা।

তখনকার সময়ে জমিদার সমাজ ও বণিক শ্রেণীর মানুষদের আনাগোনা অনেক বৃদ্ধি পেতে থাকে আর সমৃদ্ধি হতে থাকে আহসান মঞ্জিল ও রুপলাল হাউস। আর সেই সময় বুড়িগঙ্গার পাড়ে গড়ে ওঠা এই দুটি বাড়ি তখনকার বাংলার অলঙ্কার উয়ে ওঠে। এই রুপলাল হাউসের কারণে এলাকাটি আরো উন্নত হয়ে ওঠে এবং দেশি-বিদেশি পর্যটক, জমিদার ও বণিক শ্রেণী মানুষদের আসা-যাওয়া বেড়ে যায়।
এক সময় এই রুপলাল হাউসে বসত বড় বড় সংগীত আয়োজন। তখনকার সময়ে উপমহাদেশের জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী ওস্তাদ ওয়াল উল্লাহ খান ও লক্ষ্মী দেবীর মতো ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত গুরুরা রুপলালের আমন্ত্রণে এই হাউসে নিয়মিত শো করতেন।
এসব কারণে সে সময়ের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই ভবনের গুরুত্ব বেড়ে যায় অনেক। দেশ-বিদেশে এ হাউসের গ্রহণযোগ্যতা আরো বৃদ্ধির জন্য সেই সময়ের ৪৫ হাজার টাকা ব্যয়ে এর সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা হয়।
১৮৯৭ সালে ভূমিকম্পের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় রুপলাল হাউস। যার ফলে পরবর্তী সময়ে রুপলাল হাউসের বাসিন্দারা অন্য বাড়িতে স্থানান্তরিত হন। এরপর থেকে এই বাড়িটি প্রায় ৫০ বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে। আর এক পর্যায়ে এই এলাকা আবাসিক মান হারিয়ে বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে গড়ে ওঠে। এরপর রুপলাল হাউসের বংশধররা ঢাকা ছেড়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে চলে যেতে থাকেন। যার ফলে ১৯৫৮ সালে জামাল পরিবারের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয় রুপলাল হাউসটিকে। আর এরপর থেকেই রুপলাল হাউসের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘জামাল হাউস’। সেই থেকে এখন পর্যন্ত রুপলাল হাউস জামাল হাউস নামেই পরিচিত।

ঐতিহ্যবাহী এই হাউসের কোনো সংস্কার না করায় ভেঙে পড়ছে চারদিকের দেয়াল, ছাদের অংশ আর অযন্ত-অবহেলায় দেয়ালের গা বেয়ে উঠছে বটগাছ। দখল করে গড়ে উঠেছে অনেক ছোট-বড় আড়ত্ ও দোকান। খুলে পড়ছে দেয়ালের ইট ও কারুকাজ করা নকশাগুলো। এরপরও এই হাউসটিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছে সেনাবাহিনীর অসামরিক ২৮টি পরিবার।
ফরাশগঞ্জের রুপলাল হাউস বর্তমানে ‘জামাল হাউসের’ সামনে দাঁড়িয়ে একাধিক স্থানীয় জানান, রুপলাল হাউসকে একটি পর্যটন জোন হিসেবে তারা দেখতে চান। রুপলাল হাউসকে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান এলাকাবাসী। তারা বলেন, সরকারের উচিত রুপলাল হাউসকে তার আগের ঐতিহ্যে ফিরিয়ে আনা। আর রুপলাল হাউসের ভেতর-বাইরের সব বৈধ-অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের মাধ্যমে লালবাগ কেল্লা, আহসান মঞ্জিলের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা হিসেবে ঘোষণা করা।
No comments:
Post a Comment