বাংলা
গানের
প্রবাদপ্রতিম শিল্পী
হলেন
মান্না
দে। তার
অসংখ্য
গান
বাংলা
ভাষার
মানুষের মাঝে
আজো
জীবন্ত
হয়ে
আছে। থাকবে
হয়তো
আজীবন। এ
রকম
একটি
গান
হলো
কফি
হাউসের
সেই
আড্ডাটা আজ
আর
নেই। এই
গানের
মাঝে
তিনি
এমন
কিছু
চরিত্র
উপস্থাপন করেছেন,
যা
কল্পনা
করলে
সবাপুর
ব্যক্তি জীবনে
কিছু
বিষয়
কোনো
না
কোনো
ভাবে
মিলে
যায়। গানটি
শুনে
অনেকেই
নস্টালজি হয়ে
যান। সবার
জীবনে
তাই
কোনো
না
কোনো
কফি
হাউস
আছেই। কিন্তু
কলকাতার কলেজ
স্ট্রিটের কফি
হাউসের
মতো
বিখ্যাত হতে
পারেনি।
এই
বিখ্যাত কিন্তু
হয়েছে
মান্নাদের সেই
কালজয়ী
গানের
কারণেই। তাই
কলকাতায় আসা
নতুন
আগন্তুকের কাছে
দশর্নীয় স্থানগুলোর মাঝে
জায়গা
করে
নিয়েছে
এই
কফি
হাউস। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কভার করতে আসার
পর
এর
বাইরে
যেতে
পারেনি
নিজেও। অবশেষে
একদিন
কিন্তু
ঠিকই
কফি
হাউসের
আড্ডার
স্বাদ
নেয়ার
সুযোগ
হলো। সঙ্গে
ছিলেন
বাংলাদেশ থেকে
আসা
আরো
তিন
সাংবাদিক। কফি হাউস
চিনে
নিতে
মোটেই
বিলম্ব
হয়নি। কলকাতার ট্যাক্সি ডাইভার
থেকে
শুরু
করে
যে
কাউকে
জিজ্ঞেস করলেই
কফি
হাউসের
নির্দেশিকা সহজেই
পাওয়া
যায়। গাড়ি
করে
যাচ্ছি
আর
ভেতরে
ভেতরে
কেমন
জানি
অনুভব
করতে
থাকি। যতই
কাছাকাছি আসি
এক
দুর্নিবার আকর্ষণে দেহ-মনে কেমন জানি
উতলা
হয়ে
ওঠে। আসলে
সত্যি
কি
গানের
সেই
কফি
হাউসে
যেতে
চলেছি!
ছোটবেলা যখন
এই
গান
শুনেছি,
তখন
আর
দশটি
গানের
মতোই
এই
গানটিকেও মনে
হয়েছে
কল্পনাপ্রসূত। কিন্তু বাস্তবেও যে
এর
প্রমাণ
আছে
এবং
সে
জায়গাটি এবার
দর্শন
লাভ
করতে
চলেছি,
সত্যি
এ
এক
বিরল
মুহূর্ত। মনে মনে
ভাবছি
কল্পনায় আঁকা
ছবির
সঙ্গে
বাস্তবে কতখানি
মিল
থাকবে। গাড়ি
থেকে
নেমে
একজন
জিজ্ঞেস করতেই
বলে
দিলেন
আপনারা
তো
কফি
হাউসের
সামনেই
দাঁড়িয়ে আছেন। আসলে
কফি
হাউস
দেখতে
যাবো
বলে
এতটাই
আবেগপ্রবণ হয়ে
পড়েছিলাম যে
কিছুটা
বোধশক্তি হারিয়ে
ফেলেছিলাম। সেই লোকের
কথা
সম্বতি
ফিরে
পাওয়ার
পর
চেয়ে
দেখি
একটি
রনো
দালান। সেখানে
লেখা
আছে
ইন্ডিয়ান কফি
হাউস,
আলবার্ট হল। ধীরে
ধীরে
সিঁড়ি
বেয়ে
ওপরে
উঠতে
থাকি। মন
ধুঁকধুঁক করছে। এখনো
নিজেকে
বিশ্বাস করাতে
পারছি
না
কফি
হাউসে
প্রবেশ
করতে
যাচ্ছি। এক
সময়
ভেতরে
প্রবেশ
করি। দেখি
অসংখ্য
টেবিল। প্রতিটি টেবিলে
চারটি
করে
চেয়ার। লোকজন
বসে
খোশগল্পে মশগুল। কেউই
সাধারণ
হোটেলে
গেলে
যেভাবে
বসে
খাবার
খেয়ে
থাকেন
কফি
হাউসে
সে
রকম
বসে
নেই। কিছুটা
এলোমেলো ভাবে
বসা
অনেকেই। কেউ
কেউ
আবার
দিব্যি
চেয়ারে
পা
তুলে
বসে। সবাই
আড্ডায়
মগ্ন। প্রতিটি টেবিলই
যেন
কথার
বাজার। যে
কারণে
একেবারে পাশের
টেবিল
ছাড়া
নিকটবর্তী আর
কোনো
টেবিলের কোনো
কথা
বোঝার
উপায়
নেই। সবার
কথার
শব্দ
মিলে
হয়েছে
‘কিচিরমিচির’ আওয়াজ। চলছে
সিগারেটের পর
সিগারেট পান। যদিও
দেয়ালে
বড়
করেই
লেখা
আছে
‘ধূমপান
করা
সম্পূর্ণ নিষেধ।’ কিন্তু
ওদিকে
যেন
কারো
তোয়াক্কাই নেই। আড্ডায়
যদি
সিগারেট না
চলে
তাহলে
কি
আর
আড্ডা
আর
জমে!
আমরা
টেবিলে
বসতে
না
বসতেই
একজন
স্টাফ
চলে
আসেন
আমাদের
টেবিলে। খানসামাদের মতো
পোশাক
পরে
আছেন। হাতে
খাবারের মেন্যু। এই
মেন্যু
দেখে
আবার
অবাকই
হয়েছিলাম। কফি হাউসে
তো
শুধু
কফিই
থাকবে। আর
তো
কোনো
মেন্যু
থাকার
কথা
নয়। কিন্তু
ভুল
ভাঙালো
পরক্ষণেই, মেন্যু
হাতে
পাওয়ার
পর। পুরোদস্তুর একটি
খাবারের হোটেলের মতো,
অনেক
খাবারই
আছে। সকালের
নাস্তা
থেকে
শুরু
করে
দুপুর
ও
রাতের
খাবারের তালিকা। সচরাচর
কোনো
হোটেলে
খেতে
গেলে
মেন্যু
দেখে
অর্ডার
দেয়া
হয়। কিন্তু
কফি
হাউসে
আমরা
মেন্যু
দেখার
আগেই
কফির
অর্ডার
দিয়ে
দেই। মেন্যুতে দেখলাম
ঠাণ্ডা
কফিও
পাওয়া
যায়। প্রতিটি টেবিলে
চেয়ার
চারটি। আমাদের
দলও
চারজনের। কিন্তু আমরা
টেবিলে
বসে
অন্যদের মতো
খোশগল্পে ব্যস্ত
হতে
পারিনি। যে
যার
মতো
করে
এদিকে-সেদিক তাকাচ্ছেন। দেখে নিচ্ছেন কফি
হাউস। ছবি
তুলার
কাজটি
হচ্ছিল
বেশি। আমাদের
এই
কাণ্ড
দেখে
অনেকেই
একবার
হলেও
আমাদের
দিকে
তাকাচ্ছিলেন। তাদের তাকানোর ভঙ্গিতেই মনে
হচ্ছিল
তারা
বুঝে
নিয়েছেন আমরা
নতুন। দেয়ালে
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি
বিশাল
ছবি
টাঙানো। এ
ছাড়া
আছে
আরো
বেশ
কয়েকটি
চিত্রকর্ম। সেখানে গিয়েও
আমাদের
কেউ
কেউ
ছবি
তোলেন। এরই
ফাঁকে
আমি
কফি
হাউসের
ক্যাশ
কাউন্টারে থাকা
একজন
বয়স্ক
লোকের
কাছে
গিয়ে
নিজের
পরিচয়
দিয়ে
কিছু
কথা
বলার
আগ্রহ
প্রকাশ
করি। কিন্তু
তিনি
তাতে
সায়
দেননি। পরে
আমাদের
টেবিলে
কফি
দেয়া
স্টাফের কাছে
কফি
হাউসের
বর্তমান অবস্থা
সম্বন্ধে জানার
চেষ্টা
করি। কিন্তু
তিনি
আমাদের
সে
রকম
কোনো
তথ্য
দিয়েই
সহায়তা
করতে
পারেননি। এ সময়ে
পরিচিত
কারা
কারা
আসে
তার
কোনো
কিছুই
তিনি
জানাতে
পারেননি। তিনি সে
রকম
কাউকে
চিনেন
না
বলে
জানান। তবে
তিনি
জানালেন এখানে
যারা
আসে
তারা
অনেকক্ষণ থাকে। আড্ডা
মারে। কফি
হাউসের
আড্ডায়
শুধু
আমরাই
বিদেশি
ছিলাম
না। আরো
অনেক
বিদেশিই ছিলেন। প্রায়
আধঘণ্টার মতো
স্বপ্নের কফি
হাউসে
আমরা
সময়
কাটাই। ফিরে
আসার
মুহূর্তে চলে
আরেকবার ছবি
তোলার
মহরত। এরই
মাঝে
আমাদের
পরিচয়
পেয়ে
কেউ
কেউ
এগিয়ে
আসেন
কথা
বলার
জন্য। তাদের
কথার
সারাংশ
ছিল
বাংলাদেশের ক্রিকেট। ভারতের বিপক্ষে জেতা
ম্যাচ
হেরে
যাওয়াতে তারা
খুশি
হলেও
নিউজিল্যান্ডের কাছে
আবার
বাজেভাবে হারটা
তারা
মেনে
নিতে
পারেননি। তাসকিনের নিষিদ্ধ হওয়ার
ঘটনায়
মাশরাফির কান্নার খবর
জেনে
তাদের
অনেকেরই মন
খারাপ
হয়েছিল
বলে
জানান। এ
রকমই
একজন
ছিলেন
সুব্রত। কফি
হাউসের
সামনে
দাঁড়িয়ে আমার
ছবি
তোলার
সময়
তিনি
বলছিলেন বাংলাদেশকে নিয়ে
তার
ভালোলাগা আর
ভালোবাসার কথা। কফি
হাউসের
আড্ডায়
এক
সময়
মাশরাফিরা চলে
এলেও
কলকাতার ‘দাদা’
সৌরভ
গাঙ্গুলি কখনো
এসেছিলেন কি-না তা অনেককেই জিজ্ঞেস করে
জানা
যায়নি। আসলে
কফি
হাউস
শিল্প
ও
সাংস্কৃতিক অঙ্গনের লোকদের
মিলনমেলা। সত্যজিৎ রায়,
অমর্ত্য সেন,
মৃণাল
সেন,
অপর্ণা
সেন,
সুনীল
গঙ্গোপাধ্যায়, সমরেশ
মজুমদার, শক্তি
চট্টোপাধ্যায়ের মতো
ব্যক্তিত্বরা আসতেন
নিয়মিত।
Info: http://www.manobkantha.com
No comments:
Post a Comment