বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ জাদুঘর। এটি বরেন্দ্র রিসার্চ সোসাইটির একটি বড় অর্জন। শরৎকুমার রায় এবং তাঁর সহযোগী অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়, রমাপ্রসাদ চন্দ
প্রমুখ প্রত্ন-অনুরাগী এই প্রতিষ্ঠান দুটি গড়ে তোলার জন্য তাঁরা তাঁদের
সময় ও শ্রম ব্যয় করেন। তাঁদের সারা জীবনের প্রয়াস ছিল ওই সময়ের টিকে
থাকা অমূল্য প্রত্নসম্পদ (বাংলার, বিশেষ করে বরেন্দ্রীর) জনসম্মুখে প্রকাশ
করা।
অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়, রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
এবং আরও কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে প্রত্নস্থল আবিষ্কারের লক্ষ্যে শরৎকুমার
১৯১০ সালের এপ্রিলে দেওপাড়া, পালপাড়া, মালঞ্চ, জগপুর, ইটাহার, চবিবশনগর,
মান্দইল, কুমারপুর, খেতুর ও বিজয়নগর পরিদর্শন করেন। তাঁরা মান্দইল থেকে
চন্ডীর কয়েকটি প্রমাণসাইজ মূর্তিসহ প্রায় ৩২টি ভাস্কর্য সংগ্রহ করতে
সক্ষম হন। রাজশাহীতে ফিরে আসার পর শহরের গণ্যমান্য নাগরিকগণ শরৎকুমার ও
তাঁর সহকর্মীদের সংবর্ধনা জ্ঞাপন করেন এবং রাজশাহীতে প্রত্নসামগ্রী
সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। সুতরাং প্রয়োজনের তাগিদে রাজশাহী জাদুঘর
(পরবর্তীকালে বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর) গড়ে ওঠে এবং প্রত্নসামগ্রী
সংরক্ষণের জন্য শরৎকুমার মাসে ২০০ টাকা প্রদানের ব্যবস্থা করেন। ১৯১১ সালে
বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরে সংগৃহীত সকল দুষ্প্রাপ্য ও অনন্য নমুনা কলকাতার
ভারতীয় জাতীয় জাদুঘর দাবি করলে বরেন্দ্র জাদুঘরের অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার
উপক্রম হয়। বাংলার তৎকালীন গভর্নর লর্ড কারমাইকেল
১৯১২ সালে রাজশাহীতে এসে সোসাইটির সংগ্রহগুলি দেখে মুগ্ধ হন। এর অল্পকাল
পরেই বাংলার গভর্নর ১৯১৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারির ১১ নং প্রজ্ঞাপন দ্বারা
স্থানীয় জাদুঘরগুলির সংগঠকদের প্রত্নসম্পদ সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং সাধারণ্যে
প্রদর্শনের অনুমতি প্রদান করেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্যোগে ১৯০৮ সালে পশ্চিমবঙ্গের
কাশিমবাজার পরিষদের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। পরের বছর পরিষদের
দ্বিতীয় অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ভাগলপুরে। শরৎকুমার রায়, অক্ষয় কুমার ও
রমা প্রসাদ উভয় অধিবেশনে যোগাদান করে বরেন্দ্রভূমির পুরাকীর্তি সম্পর্কে
জ্ঞানগর্ভ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এবং তারা রাজশাহী ফিরে এসে বরেন্দ্র
পুরাকীর্তি সম্পর্কে অতি উংসাহী হয়ে উঠেন। ১০১০ সালে তারা বগুড়া জেলার
খঞ্জনপুরে পুরাতাত্ত্বিক অভিযানে যান এবং এর ঐতিহ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণের
জন্য একটি সমিতি গঠনের বিষয়ে ঐকমত্য হয়ে গঠন করেন বরেন্দ্র অনুসন্ধান
সমিতি। সমিতি অনুসন্ধান চালিয়ে রাজশাহী জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে কালো
পাথরের বিখ্যাত গঙ্গা মূর্তিসহ পুরাতত্ত্বের ৩২ টি দুষ্প্রাপ্য নিদর্শন
সংগ্রহ করে। সমিতির সম্পাদক রামপ্রসাদ চন্দ সমুদয় নিদর্শন প্রধানত পুরাতন
স্থাপত্যের নিদর্শন, পুরাতন ভাস্কর্যের নিদর্শন ও পুরাতন জ্ঞান ধর্ম
সভ্যতার নিদর্শন (যেমন পুঁথি) এই তিন ভাগে বিভক্ত করেন। কুমার শরৎকুমার
রায়, অক্ষয় কুমার মৈত্রেয় ও রমাপ্রসাদ সমিতির ব্যয় নিবার্হের জন্য
ব্যক্তিগত যে অর্থ প্রদান করেন তা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় কম। তৎকালীন
বঙ্গীয় সরকার সমিতিকে একশ টাকা করে অনুদান দিত । এই আথিক অনটনের মধ্যে
সংগৃহীত নিদর্শনসমূহ সংরক্ষণের জন্য একটি মিজিয়াম ভবন নিমার্ণ অপরিহার্য
হয়ে পড়ে এবং তা ব্যয়বহুল জানা সত্ত্বেও শরৎকুমার বন্ধুদের অনুরোধে নিমার্ণ
কাজ শুরু কনের । সমিতির কর্মকর্তাদের অনুরোধে তৎকালীন বাংলার গভর্নর লর্ড
কারমাইকেল ১৯১৬ সালের ১৩ নভেম্বর ভিত্তিপ্রস্তার স্থাপন করেন । নিমার্ণ
শেষে ১৯১৯ সালের ২৭ নভেম্বর দ্বার উম্মোচন করেন লর্ড রোনাল্ডসে। ১৯৪৭ এর পর
বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর মারাত্মক দুদশাগ্রস্ত অবস্থায় পড়ে । যার ফলে এটি
রক্ষা ও পুনর্গঠনের প্রয়োজনে ১৯৬৪ সালের ১০ অক্টোবর হস্তান্তর করা হয়
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কতৃর্পক্ষের কারছ। বর্তমানে রাজশাহী
বিশ্ববিদ্যালয়েরই অধীন। ১৯১১ সালে কোলকাতা জাদুঘর বরেন্দ্র জাদুঘরের যাবতীয়
সংগ্রহ দাবি করেছিল। ফলে এর অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল। এ
প্রেক্ষাপটে তৎকালীন রাজশাহী বিভাগের কমিশনার এফ.জে মনোমোহনের প্রচেষ্টায়
বাংলার গভর্ণর লর্ড কারমাইকেল বরেন্দ্র জাদুঘর পরিদর্শনে এসে সংগহ দেখে
মুগ্ধ হন। এরপর ১৯১৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সরকারী সার্কুলারের মাধ্যমে
স্থানীয় জাদুঘরগুলোকে সংগ্রহের বিষয়ে স্বাধীনতা দেয়া হলে বরেন্দ্র গবেষণা
জাদুঘরের অস্তিত্ব রক্ষা হয়। ২০০০ সালের ১৫ জুলাই প্রকাশিত যুগান্তর
প্রত্রিকার তথ্যানুসারে জাদুঘরের এ পযর্ন্ত সংগ্রহ সংখ্যা সাড়ে আট হাজারেরও
বেশি । এর মধ্যে প্রায় দেড় হাজার প্রস্তর ও ধাতব মূর্তি, ৬১ টি লেখ চিত্র ২
হাজারেরও বেশি প্রাচীন মুদ্রা, ৯শ'র বেশি পোড়ামাটির ভাস্কর্য-পত্র-ফলক,
প্রয় ৬০টি অস্ত্রশস্ত্র, প্রায় ৩০টি আরবি-ফার্সি দলিল, মোগল আমল থেকে
ব্রিটিশ আমল পযর্ন্ত বিভিন্ন প্রকারের রৌপ্য-ব্যোঞ্জ-মিশ্র ধাতুর প্রায়
৪০০টি মুদ্রা। এছাড়াও প্রায় সাড়ে চার হাজারেরও বেশি পাগুলিপি আছে। এসব
সংগ্রহ মোট ৮টি গ্যালারিতে দর্শকদের জন্য উম্মুক্ত করা আছে।
শরৎ কুমার নিজ ব্যয়ে তাঁর বড় ভাই দিঘাপতিয়ার রাজা প্রমদানাথ রায়ের
দানকৃত জমির উপর জাদুঘরের জন্য ভবন নির্মাণ করেন। ১৯১৬ সালের ১৩ নভেম্বর
লর্ড কারমাইকেল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯১৯ সালের ২৭ নভেম্বর
সম্পাদিত দানপত্রের মাধ্যমে শরৎকুমার সম্পূর্ণ সুসজ্জিত ভবনটি জাদুঘর ও
পাঠাগারের নিমিত্তে সোসাইটিকে প্রদান করেন। একই দিন গভর্নর লর্ড রোনাল্ডসে
এটি উদ্বোধন করেন।
ভাস্কর্য, খোদিত লিপি, পান্ডুলিপি, মুদ্রা
এবং অন্যান্য মূল্যবান প্রত্নসম্পদ সংগ্রহের জন্য শরৎকুমার ও তাঁর
সহযোগীবৃন্দ বাংলার বিভিন্ন জেলায় অনুসন্ধান চালান। তাঁরা বেশ কিছু
প্রত্নসম্পদ আবিষ্কার, শনাক্ত ও সংগ্রহ করেন। সাফল্যে অনুপ্রাণীত হয়ে
সোসাইটি দেওপাড়ায় প্রদ্যুম্নেশ্বর দিঘি খনন করে এবং এর ভেতর থেকে ৬৪টি
ভাস্কর্য এবং তিনটি পোড়ামাটির মনসা-ঘট
উদ্ধার করে। ১৯১১ সালে সোসাইটির কয়েকজন সদস্য পশ্চিম দিনাজপুরের বালুরঘাট
থেকে ৫ মাইল দূরবর্তী কোসীপুর ঢিবি খনন করে ইটের তৈরি দেয়াল, ঢিবিমুখী
একটি ইটের রাস্তা এবং কয়েকটি ভাস্কর্য উন্মুক্ত করেন। ১৯১৬ সালের নভেম্বরে
সোসাইটির সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ মাহীসন্তোষ এবং রাজশাহী জেলার
কুমারপুর প্রত্নস্থলে খনন কাজ চালিয়ে প্রচুর প্রত্নসম্পদ সংগ্রহ করেন।
দেবদত্ত রামকৃষ্ণ ভান্ডারকরের নেতৃত্বে ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের
সহযোগিতায় ১৯২৩ সালে সোসাইটি পাহাড়পুরে খননকাজ শুরু করে। শরৎ কুমার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
কর্তৃপক্ষকে প্রতিবছর ২০০০/- টাকা করে পাঁচ বছর ধরে প্রদানের প্রতিশ্রুতি
দেন। কিন্তু প্রথম বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরই বিশ্ববিদ্যালয় এই পরিকল্পনা
পরিত্যাগ করে। এরপর প্রত্নতত্ত্ববিভাগ খনন কাজ পরিচালনা করে এবং বরেন্দ্র
গবেষণা জাদুঘরের কিউরেটরের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকেন। জাদুঘর নিজের অংশ
হিসেবে ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের নিকট থেকে পাহাড়পুর উৎখননে প্রাপ্ত প্রত্নসামগ্রী থেকে ২৬৫টি প্রত্নসামগ্রী লাভ করে।
১৯৩৭ সালের ৬ নভেম্বরের এক সরকারি প্রজ্ঞাপন মোতাবেক প্রতিষ্ঠিত
ম্যানেজমেন্ট কমিটির নিকট বরেন্দ্র রিসার্চ সোসাইটি বর্তমান বিল্ডিং-এর উপর
এর স্বত্বাধিকার, সকল প্রত্নসংগ্রহ, ছাপানো বই ও পান্ডুলিপি এবং আসবাবপত্র
তুলে দেয়। তালিকায় অন্তর্গত ছিল ৭৬০টি প্রস্তর ভাস্কর্য, ৪৭টি
ধাতুনির্মিত ভাস্কর্য, ২টি কাঠের ভাস্কর্য, ৪টি মৃন্ময় ভাস্কর্য, ৪টি
কামান, ২১১টি অলঙ্কৃত ইট, ৪২টি পোড়ামাটির ফলক, ২৯টি চকচকে টালি, ১৭টি
প্রস্তরলিপি, ২৩টি পোড়ামাটির লিপি, ৪টি দলিল (কাগজ), ধর্মীয়
অনুষ্ঠানাদিতে ব্যবহূত ১১১টি পাত্র (ধাতু নির্মিত), ১০টি গহনা, ৪৩৪টি
স্বর্ণমুদ্রা এবং ৪টি পোশাক-পরিচ্ছদ। এছাড়া সোসাইটি ১৮৩২টি বই এবং ২৫৩০টি
সংস্কৃত ও ১২২৩টি বাংলা পান্ডুলিপি কমিটির হাতে তুলে দেয়।
জাদুঘর এনডাউমেন্ট ও প্রকাশনা তহবিল এবং সবিতা রায় স্মৃতি তহবিল
(সংস্কৃত গ্রন্থ প্রকাশের জন্য শরৎকুমার রায় কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত) জাদুঘরের
নিয়ন্ত্রণাধীন হয়। ১৯২৩ সালে প্রাদেশিক সরকারের যে অনুদান জাদুঘরের জন্য
বরাদ্দ হয়েছিল তা আবার শুরু হয়, অবশ্য ২০% হ্রাসকৃত হারে। প্রকাশনা ও
খননকাজের ব্যয়ের নিমিত্তে সরকারি অনুদানের পরিপূরক হিসেবে শরৎকুমার
উদারভাবে অর্থ দান করেন।
১৯৩০ সালে অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় এবং ১৯৪৫ সালে শরৎ কুমার রায়ের
মৃত্যুর ফলে জাদুঘরের অপূরণীয় ক্ষতি হয়। ১৯৪৭ সালের দেশবিভাগ জাদুঘরের
অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তোলে। ১৯৪৯ সালে জাদুঘরটিকে মেডিকেল স্কুলে রূপান্তর
করা হয়। ১৯৬১ সাল পর্যন্ত জাদুঘরের উত্তরাংশ স্কুলের দখলে ছিল।
দেশ বিভাগের পর থেকে প্রায় ১৯ বছর জাদুঘরটি প্রায় অচল অবস্থায়
পড়ে ছিল। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একাউনটেন্ট জেনারেল প্রমিজরি নোটসমূহ আটকে
দিলে সেগুলি কলকাতা থেকে পূর্বপাকিস্তানে আনা সম্ভব হয় নি। ফলে
ট্রাস্টফান্ড থেকে জাদুঘর মাসিক ১১০০ টাকার যে সুদ পেত তা স্থায়ীভাবে বন্ধ
হয়ে যায়। মাঝে মাঝে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের নিকট থেকে জাদুঘর যে
সাময়িক অনুদান পেত তার ওপরই এটি সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। তাই
দিয়েই প্রতিষ্ঠানটি তার প্রত্নসংগ্রহ ও লাইব্রেরিতে নতুন সংযোজন চালিয়ে
যেতে থাকে। এই সময়ের মধ্যে ১৯৫৮ সালে জাদুঘরটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের
আনুকূল্যে কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট থেকে গবেষণা কর্মের প্রকাশনার জন্য দশ
হাজার টাকার একটি অনুদান লাভ করে। একইসূত্রে এবং একই উৎস থেকে জাদুঘর ১৯৬১
সালে ত্রিশ হাজার টাকার একটি অনুদান পায়। এই অর্থপ্রদানের উদ্দেশ্য ছিল
একটি লাইব্রেরি ভবন নির্মাণ করা, যাতে জাদুঘরের স্থানাভাব দূর করা যায়।
প্রাদেশিক সরকার এই আর্থিক অনুদানের পরিপূরক হিসেবে ১৪০০০ টাকা সুদমুক্ত ঋণ
বরাদ্দ করে। ১৯৬১ সালে মেডিকেল স্কুলটি জাদুঘরের উত্তরাংশ জাদুঘরকে
প্রত্যর্পণ করলে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে ১৯৬১ সালে বর্তমান লাইব্রেরি ভবনটি
নির্মিত হয়। কিউরেটরের বাসভবন এবং অন্যান্য সম্পত্তির ক্ষতিপূরণের জন্য
জাদুঘরের দেয়াল ঘেরা চত্বরে নির্মিত স্কুলের এনাটমি জাদুঘর ভবনটি বরেন্দ্র
গবেষণা জাদুঘরকে দেওয়া হয়।
দেশ বিভাগের পরও জাদুঘর-এর কার্যাবলির ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে।
কিন্তু জাদুঘরের মতো একটি প্রতিষ্ঠান অনিয়মিত সরকারি অনুদানের ওপর নির্ভর
করে অনির্দিষ্টকাল চলতে পারে না। ১৯৬১ সালে পাকিস্তান সরকার জাদুঘর
পরিচালনা পর্ষদের ওপর শর্ত আরোপ করে যে, জাদুঘরটি প্রাদেশিক সরকারের হাতে
তুলে দেওয়া না হলে জাদুঘরের উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন করা হবে না। পরিচালনা
পর্ষদ জাদুঘর সরকারের নিকট অর্পণ করাকে এর উদ্দেশ্য জলাঞ্জলি দেওয়ার
নামান্তর বিবেচনা করে জাদুঘরটি সরকারের হাতে তুলে দিতে অস্বীকার করে।
বরেন্দ্র জাদুঘরের সংগ্রহ সংখ্যা ৯ হাজারেরও অধিক। এখানে হাজার বছর আগের সিন্ধু সভ্যতার নিদর্শন রয়েছে। মহেনজোদারো সভ্যতা থেকে সংগৃহীত প্রত্নতত্ত, পাথরের মূর্তি, খিষ্ট্রীয় একাদশ শতকে নির্মিত বুদ্ধ মূর্তি, ভৈরবের মাথা, গঙ্গা মূর্তি সহ অসংখ্য মূর্তি এই জাদুঘরের অমূল্য সংগ্রহের অন্তর্ভুত। মোঘল আমলের রৌপ্র মুদ্রা, গুপ্ত সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের গোলাকার স্বর্ণমুদ্রা, সম্রাট শাহজাহানের গোলাকার রৌপ্য মুদ্রা বিশেষ ভাবে উল্যেখয়োগ্য। এখানে প্রায় ৫০০০ পুঁথি রয়েছে যার মধ্যে ৩৬৪৬টি সংস্কৃত আর বাকিগুলো বাংলায় রচিত। পাল যুগ থেকে মুসলিম যুগ পযর্ন্ত সময় পরিধিতে অঙ্কিত চিত্রকর্ম, নূরজাহানের পিতা ইমাদ উদ দৌলার অঙ্কিত চিত্র এখানে রয়েছে।
তথ্যসূত্র: http://bn.banglapedia.org/index.php
No comments:
Post a Comment