Pages

Sunday, December 27, 2015

রুপসী এই বাংলা


প্রকৃতির লীলাক্ষেত্র আমাদের এ রূপসী বাংলাদেশ। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়, জলপ্রপাত, বনভূমি এদেশকে করে তুলেছে অপূর্ব রূপময়।এছাড়াও বাংলাদেশের কিছু পাহাড়-পর্বত ছাড়া সমগ্র বাংলাদেশ এক বিশা বদ্বীপ। অর্থাৎ, সমভূমি অঞ্চল।
আয়তনঃ বাংলাদেশ এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। এ দেশ ২০° ৩৪' উত্তর অক্ষরেখা থেকে ২৬° ৩৮' উত্তর অক্ষরেখার মধ্যে এবং ৮৮°০১' পূর্ব দ্রাঘিমারেখা থেকে ৯২° ৪১' পূর্ব দ্রাঘিমারেখার মধ্যে অবস্থিত। বাংলাদেশের মাঝামাঝি স্থান দিয়ে কর্কটক্রান্তি রেখা অতিক্রম করেছে। বাংলাদেশের আয়তন ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটার। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর ছাড়া সারা দেশটির চারপাশ ঘিরে রেখেছে ভারত।
বাংলাদেশের নদনদীঃ নদী মাতৃক দেশ বাংলাদেশ। বাংলাদেশ একটি ছোট্ট আয়তনের সবুজ শ্যামলে ঘেরা একটি দেশ। যার সর্বোত্র ছোট-বড় অসংখ্য জলাশয় জালের মত ছড়িয়ে আছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ১৯৯৬-৯৭ সালের তথ্য অনুসারে দেখা যায়, বাংলাদেশের নদী অঞ্চলের আয়তন ৯,৪০৫ বর্গ কিলোবাইট। বাংলাদেশের নদীর সংখ্যা প্রায় ৭০০। আর নদীবহুল দেশ বলে স্বাভাবিকভাবেই এ দেশের মানুষের জীবনযাত্রার ওপর নদীর প্রভাব রয়েছে। পদ্মা, বহ্মপুত্র, যমুনা মেঘনা ও কর্ণফুলী বাংলাদেশের প্রধান নদী। এ নদীগুলোর উপনদী ও শাখানদী রয়েছে। উপনদী ও শাখানদী সহ বাংলাদেশে নদীর মোট দৈর্ঘ্য হল প্রায় ২২,১৫৫ কিলোমিটার। এ সকল নদনদী এর সমভূমি অঞ্চলকে করেছে শস্য শ্যামলা ও অপরুপ সৌন্দর্যের অধিকারী। প্রকৃতি যে কি আশ্চর্য সুন্দর তা বাংলাদেশের প্রতিটি ঋতুকে দৃষ্টিতে লক্ষ না করলে বুঝা যায় না। তাই বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে এদেশে যুগে যুগে এসেছেন বহু পর্যটক, কবিরা লিখেছেন কবিতা।হেমন্তকালের প্রকৃতি আষাঢ়-শ্রাবণ কিংবা ভাদ্র মাসের মতো বৃষ্টি হবার কথা নয়, কারো মন মন্দির স্যাঁতস্যাঁতে থাকার কথা নয়। এ সময়ে ফসলে ফসলে ছড়িয়ে থাকে মাঠ-ঘাট-বন বাদাড়। সৃষ্টির সকল জীবের মাঝে মাঝে দেখা মেলে চঞ্চলতা, সখা-সখিদের কলকাকলিতে মুখরিত থাকে আকাশ-বাতাস-প্রান্তর। শীত, গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষার মতো হেমন্ত তীব্র, প্রখর অথবা মুখরা নয়, তাই হেমন্তকে আলাদা করে দেখা যায় না, ম্লান, ধুসরিত আর অস্পষ্ট হেমন্ত কাল শুধু অনুভবের। বসন্তের তীব্র ফুলের গন্ধ, পাখির গান অথবা গ্রীষ্মের খরতাপ, বৈশাখী ঝড় কিংবা বর্ষার ভরা নদী নালা, ঘনঘোর বরষায় দিনব্যাপী ঝমঝম বৃষ্টির মতো করে হেমন্ত জানান দেয় না আমি আছি, আমি এসেছি। বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। ছয়টি ঋতুতে প্রকৃতির ছয় রকম অবস্থা দেখা যায়। গ্রীষ্মকালে বাংলাদেশের প্রকৃতি হয়ে ওঠে এক উদাসীন সন্ন্যাসীর মতো। তার রুক্ষ রৌদ্রের দাবদাহে মানবজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এ সময়ে কালবৈশাখি তার উদ্দামতা নিয়ে আসে। গ্রীষ্মের পর আসে বর্ষা। বর্ষায় এ দেশের প্রকৃতিতে যেন নতুন করে প্রানের সঞ্চার হয়। তখন প্রকৃতি হয়ে ওঠে সজীব ও সতেজ। ফসল ভরা ক্ষেতগুলো দেখলে মনে হয় আবহমান। ধানসিঁড়ির সমুদ্র। তখন মনে হয় প্রকৃতি যেন তার সমস্ত গ্লানি মুছে ফেলে। চাঁদনী রাতের শোভা তখন বড়ই মনোলোভা মনে হয়। কবি তাই বলেন-
“চাঁদনীর সাথে প্রতি রাতে রাতে
গোলা সোনা রং ঢালে যে
খুব মনোচোর শরতের ভোর
আলোছায়া ঋতু বড়সে।
শরতের শেষে, শীতের আগে আসে হেমন্ত ঋতু। এ সময় সোনালী ফসলে ভরা থাকে মাঠ-ঘাট। আর সোনালি ধানের শীষে যখন বাতাসের খেলা চলে তখন বাংলার নিসর্গে স্বর্গের ছোঁয়া লাগে। হেমন্তের পর শুষ্ক শীতল চেহারা নিয়ে আসে শীত। এ সময়ে প্রকৃতি বিবর্ন ও বিষন্ন হয়ে পড়ে। শীতের শেষে আসে ঋতুরাজ বসন্ত। গাছপালা তখন সজীব হয়ে ওঠে। গাছে গাছে নতুন পাতা গজায় নতুন নতুন ফুল ফোঁটে।

হেমন্তের প্রকৃতি সকালের সোনারঙা রোদ বাড়িয়ে দেয় বাংলার পথঘাট আর মাঠের উজ্জ্বলতা, গ্রামের মাঠে যতদূর চোখ যায় সোনালি ধান। লাউয়ের মাচায় যৌবনবতী তরুণীর মতো লিকলিকে প্রতিটি ডগার খিলখিল হাসি, হাওড়-বিলে অতিথি পাখিদের ডানা ঝাপটানোর শব্দ। কুয়াশার ধূসর চাদর গায়ে হুট করে এক ভোরে দোরে হানা দেয় কমনীয় শীত। বাউলেরা রঙিন পোশাকে গান গেয়ে বেড়ায়। জুঁই, গোলাপ, শাপলা, বাগানবিলাস সহ অনেক ফুলের ভেতর দিয়ে প্রকৃতি প্রাণ ফিরে পায়। এ সময়ের নির্মল বাতাস প্রকৃতিকে আকর্ষণীয় করে তোলে।
গান, কবিতায় কত রং রূপেই না ধরা দেয় হেমন্ত। তবে হেমন্ত শুধু হেমন্ত নয়, হেমন্ত মানে শীতের আগমনী বার্তা। একটু খেয়াল করলেই চোখে পড়ে, ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে প্রকৃতি। শহরে অতটা টের পাওয়া না গেলেও, গ্রামে খুব চোখে পড়ে প্রকৃতির এ বদলে যাওয়া। গাছীরা এখন খেজুর গাছ পরিষ্কার করার কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। গ্রামবাংলার এই চিরচেনা রূপ হেমন্তের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।

No comments:

Post a Comment