Pages

Thursday, December 3, 2015

বিপিএলের ভেতরে-বাইরে



শুরুতেই কত্ত কাণ্ডকীর্তি বিপিএলথ্রিকে ঘিরে! গায়ের জোরে নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলে স্টেডিয়ামে ঢুকে পড়া কিংবা খেলোয়াড় তালিকা নিয়ে অদ্ভুতুরে ঝামেলা সৃষ্টি-প্রথম দুই দিনেই অভাবিত দুটি কাণ্ড ঘটেছে বিপিএলের এবারের আসরে। মিরপুর ছাপিয়ে সারা দেশে প্লেগের মতো ছড়িয়ে পড়ছে ক্রিকেট-জুয়া। তবে এর মধ্যেও চলছে জমজমাট ক্রিকেট। অনেক মন্দের ভেতর সে ভালোটুকু দেখছেন শেয়ার মার্কেটের রমরমা দিনগুলোর কথা খুব মনে পড়ছে ইদানীং। 

 মতিঝিলের স্টক মার্কেট কার্যালয়ে স্থান সংকুলান হচ্ছে না দেখে ব্রোকারেজ হাউসগুলো শাখা-উপশাখা খুলে বসেছে শহরে-উপশহরে। তাতেও উপচানো ভিড়ে হাসিখুশি মুখগুলো এখন আর নেই। মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের একটি বহুতল মার্কেটের নিচতলার একটি উপশাখা থেকে বেরোনো মাঝবয়সী গৃহিণী কি আঁচলের খুঁটে চোখই মুছছিলেন? নাও হতে পারে। তবে শেয়ারবাজারে লগ্নি করে সর্বস্বান্ত হওয়ার বেদনা কি লুকানো যায়!
বাংলাদেশ ক্রিকেটেরশেয়ার মার্কেটে একই দশা অবশ্যম্ভাবী। বিশাল এক জনগোষ্ঠী যে ক্রিকেট-জুয়ায় জড়িয়ে ফেলেছে নিজেকে! বাংলাদেশে জুয়া বৈধ নয়, ইয়াবাও তো নয়। তবু ইয়াবার থাবায় প্রায় প্রতিদিনই শিকার হচ্ছে নতুন কোনো জীবন। ক্রিকেট-জুয়াও তেমনি। তো সেই জুয়াড়িদের সিংহভাগেরই আবার ক্রিকেটজ্ঞান নেই। তারা খোঁজ নেয় ক্রিকেট বোঝে, এমন নিকটজনের কাছে। সে মতে বাজি ধরে পাড়া-মহল্লার ক্রিকেট জুয়াড়িদের অবৈধ আউটলেটে। কখনো জেতে, বেশির ভাগ সময়ই হারে। সেদিন চেনা এক সাংবাদিক বলছিলেন তেমন একজনের কথা, যিনি ক্রিকেট-জুয়া খেলতে খেলতে জমিটমি বিক্রি করে সর্বস্বান্ত হওয়ার পথে
পুঁজিবাজার অবশ্য বৈধ। দেশের অর্থনীতিতে কার্যকর ভূমিকাও রেখে থাকে। বাজারে সর্বস্বান্ত হওয়ার সিংহভাগ দায় সেই শেয়ারমার্কেট জালিয়াতদের, যাদের সবার বিরুদ্ধে রাষ্ট্র ব্যবস্থা নিতে না পারলেও আমরা তাদের নাম জানি, চিনিও। তবে কিছুটা দায় নিজেদের ওপরও বর্তায়। মুফতে লাভের আশায় ওভাবে অচেনা জগতে পা না বাড়ালে কি হতো না? তাই ক্রিকেট-জুয়া ঠিক শেয়ারমার্কেটের সঙ্গে শত ভাগ মেলে না, বরং ড্রাগের সঙ্গে মিলটা বেশি
ড্রাগের কোনো শ্রেণিভেদ নেই। একটা সময় শুনতাম, হেরোইনসেবীদের সবাই ধনাঢ্য ব্যক্তি। পরে জানা গেল, শ্রমিকশ্রেণিতেও এর ভোক্তা আছে। ফেনসিডিল নিচুতলা থেকে উপরতলা গ্রাস করেছে একসময়। এখন চলছে ইয়াবার যুগ। এর নারী-পুরুষ-বয়সভেদ নেই বলেই শুনি। কত পরিবার যে উজাড় হয়েছে এতে! পরিচিত সাংবাদিকের সেই আত্মীয়ের গল্পটা তাই আতঙ্কের-নিঃস্বতার নতুন উপসর্গ কি না হলো ক্রিকেট! ধনী তবু টাকার জোরে জুয়ায় হার পুষিয়ে নেবে, কিন্তু শ্রমিকগোষ্ঠীকে বাঁচাবে কে? একজন জমি বিক্রি করেছেন মানে ধরেই নেওয়া যায় আরেকজন স্ত্রীর গয়না বেঁচে ছুটছেন জুয়ার বাজারে। যেমনটা নেশাসক্তরা করে থাকেন। কী ভয়ংকর!
হ্যাঁ, নেশা আর ক্রিকেট-জুয়া এখন দেশজুড়ে চলছে সমানতালে। জুয়ার পরিধি আর শুধু বিপিএলে সীমাবদ্ধ নেই। টিভিতে সম্প্রচারিত যেকোনো ম্যাচেইবেটধরে বাংলাদেশের মানুষ। সে ম্যাচ আন্তর্জাতিক হোক কি ইংলিশ কাউন্টি, দলের শক্তি দূরের কথা নামটাও ঠিক জানেন না। কিন্তু বাজি ধরেন গ্রামের কৃষক থেকে শহরের দিনমজুর, মফস্বলের ছোটকর্তা থেকে শুরু করে রাজধানীর উঁচুতলার মানুষ। জেতেন মাঝমধ্যে, হারেন বেশির ভাগ সময়-জুয়ার রীতিই তো এটা। ড্রাগের সর্বস্বান্ত মানুষ অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠে ক্রমশ। অপরাধজগতে ক্রিকেটও নতুন ব্র্যান্ডের অপরাধীর আমদানি ঘটাতে চলেছে। একমাত্র প্রশাসনই পারে অপরাধ নির্মূল করতে। তারা সেটি করবে কি? নাকি ড্রাগের মতো ক্রিকেট-জুয়ার অন্ধকার জগতেও তলিয়ে যাবে অনেক মানুষ, পরিবার, জনপদ?
কাকতালীয় ব্যাপারই হবে। ১০ নম্বর সেকশনের শাহ আলী মার্কেটের নিচতলার একটি ব্রোকারেজ হাউস থেকে বিষণ্ন ভদ্রমহিলা বেরোনোর ঘণ্টাখানেক পর বড় একটি জমায়েত হলো সেখানে। মিরপুর স্টেডিয়ামের প্রেসবক্সে থাকার কারণে স্বচক্ষে জমায়েতটা দেখার সুযোগ হয়নি। পরে শুনেছি, বিপিএলের সবচেয়ে আলোচিত্যালিশুরু মিরপুর ১০ নম্বর গোলচক্করেই। বেক্সিমকোর কর্ণধার সালমান এফ রহমানের পুত্র শায়ান এফ রহমান ১২০০- মত লোক জড়ো করেন।ঢাকা’, ‘ঢাকামিছিল করতে করতে ঢুকে পড়েন স্টেডিয়ামের নিরাপত্তা বেষ্টনী ঠেলে। এতে পদদলিত হয়ে ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটতে পারত। মি. শায়ান অতকিছু ভাবেননি, তা পরিস্কার
কেউই আজকাল অতশত ভাবেটাবে না সম্ভবত। নইলে পাঁচ দিন আগে দলে যোগ দেওয়া ক্রিকেটারের কাগজপত্র যে বৈধ নয়, সেটি কেন ম্যাচের আগে জানবে সিলেট সুপারস্টারস! অনন্যোপায় হয়ে দলটি দুই বিদেশিকে নিয়ে গড়া একাদশ জমা দিল টসের সময়। কিন্তু পরে নামল চার বিদেশিকে নিয়ে! মাপের টুর্নামেন্টে যা কখনো ঘটেনি, আর ঘটবেও না। এর প্রতিবাদে প্রতিপক্ষ চিটাগং ভাইকিংস খেলতে অস্বীকৃতি জানায়। ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পর ম্যাচ শুরু হয় ঠিকই, তবে এর মাঝখানে মান-অপমানের অনেক কাণ্ড ঘটে যায়। এর মধ্যে শুধু তামিম ইকবালেরটাই আমরা শুনেছি, বাকিগুলো আড়াল নিয়েছে লজ্জার আবরণে। খোঁজ নিয়ে যতটুকু জেনেছি, পুরো ঘটনার মূল দায় পেশাদারি বিসিবির অপেশাদারিত্বের। মোটা দাগে যা অযোগ্যতাই। বলার অপেক্ষা রাখে না, নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করতে বিষয়টিচেপে যাবে বিসিবি!
অবশ্য বিতর্ককে ধামাচাপা দেয়ার কাজটা দারুণভাবে করে যাচ্ছে মাঠের ক্রিকেট। ম্যাচ ফিক্সিং কেলেঙ্কারি আর খেলোয়াড়দের দেনা-পাওনা কেলেঙ্কারিতে থমকে পড়া বিপিএল এবার শুরুই হয়েছে বিস্ফোরক এক ম্যাচ দিয়ে। ৪৯ ঘণ্টা বিমান ভ্রমণ করে, সারারাত না ঘুমিয়ে মাঠে নেমেছিলেন সাকিব আল হাসান তাঁর রংপুর রাইডার্সকে নিয়ে। প্রতিপক্ষ তামিমের চিটাগং ভাইকিংস। সাকিব ব্যাটে-বলে সে রকম কোনো ভূমিকাই রাখতে পারেননি। তবু তামিমদের ১৮৭ রানের ইনিংস শেষ বলে রংপুরের টপকে যাওয়ার রুদ্ধশ্বাস নাটক বিপিএল উত্তেজনার বারুদে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে নিঃসন্দেহে। পরের ম্যাচে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের ১১০ রানের ইনিংস ঢাকা ডিনামাইটস ছাড়িয়ে গেছে শেষ ওভারে। পরের দুই দিনেও সে অর্থে নিষ্প্রাণ ম্যাচ হয়নি, উত্তেজনার সলতেটা তাই জ্বলছেই
ব্যক্তিগত নৈপুণ্যও কম আকর্ষক নয়। টি-টোয়েন্টিতে নিজের ব্যাটিং নিয়ে বিস্তর অসন্তোষ আছে তামিমের নিজের মনেই। সে অসন্তোষটাই তিনি যেন ঝাড়ছেন এবারের বিপিএলে। প্রথম দুই ম্যাচে ঝড়ো ফিফটি যেন তারই ইঙ্গিত। অধিনায়কের ব্যাটে চড়ে প্রথম তিন ম্যাচে ১৮০ রানের আশপাশে ইনিংস গড়েছে চট্টগ্রামের দলটি। দলগতভাবে ভাইকিংসের ব্যাটিং লাইনআপটাই তাই সবচেয়ে শক্তিধর দেখাচ্ছে। কিন্তু বোলিং দুর্বলতা একজন মোহাম্মদ আমিরকে দিয়ে আড়াল করতে পারছে না চট্টগ্রাম। ব্যাট হাতে মাহমুদ উল্লাহ এরই মধ্যে একটি ম্যাচ জিতিয়েছেন বরিশাল বুলসকে। তবে আসরের প্রথম ভাগে মাশরাফি বিন মর্তুজার ব্যাটসম্যানশিপের পুনরুত্থানই সবচেয়ে বেশি উপভোগ করেছেন তিনি নিজে সবাই। তামিমের দলের বিপক্ষে তাঁর অপরাজিত ফিফটি বিপিএলের পরবর্তী আসরেরটিভিসিতে জায়গা পাবেই পাবে! বোলার মুস্তাফিজ, আল আমিনদের দেখে নিশ্চয় খুশি জাতীয় দলের কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহে
ঠিক ততটাই উদ্বেগের লিটন কুমার দাশের ব্যাটিং। তাঁর প্রতিভা নিয়ে সংশয় নেই। কিন্তু বেশ কিছুদিন হলো ব্যাটে রান নেই তরুণের, যাঁর সঙ্গে খেলতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করেন মুশফিকুর রহিম। দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে Íবিশ্বাসের অভাবে ভুগছেন লিটন। খেলার ধরন পাল্টে রানে ফেরার চেষ্টায় তিনি। সব ব্যাটসম্যানই দুঃসময় দেখেন, খেলার ধরনও পাল্টে ফেলেন Íবিশ্বাসের অভাবে। লিটনের বেলায় মনে হচ্ছে, তিনি একটুকনফিউসডও। ঠিক কী করবেন বুঝতে পারছেন না। এটাই দুশ্চিন্তার। অবশ্য অবস্থা থেকেও ফিরে আসেন বড় খেলোয়াড়রা। আশা করা যায়, লিটনও ফিরবেন দাপটে। বিপিএলের বাকি অংশ তো পড়েই রয়েছে তাঁর জন্য। পেছন থেকে টিম ম্যানেজমেন্টের উদ্বাহু সমর্থন রয়েছে বোনাস হিসেবে
বিপিএলের কিছু পজিটিভ দিকও কিন্তু আছে। কারো জ্বলে ওঠার কিংবা কারো ট্র্যাকে ফেরার মঞ্চ যে!
info:  http://www.kalerkantho.com/feature/khalar-ghor/2015/11/27/295033

শুরুতেই কত্ত কাণ্ডকীর্তি বিপিএল ‘থ্রি’কে ঘিরে! গায়ের জোরে নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলে স্টেডিয়ামে ঢুকে পড়া কিংবা খেলোয়াড় তালিকা নিয়ে অদ্ভুতুরে ঝামেলা সৃষ্টি-প্রথম দুই দিনেই অভাবিত দুটি কাণ্ড ঘটেছে বিপিএলের এবারের আসরে। মিরপুর ছাপিয়ে সারা দেশে প্লেগের মতো ছড়িয়ে পড়ছে ক্রিকেট-জুয়া। তবে এর মধ্যেও চলছে জমজমাট ক্রিকেট। অনেক মন্দের ভেতর সে ভালোটুকু দেখছেন সাইদুজ্জামান - See more at: http://www.kalerkantho.com/feature/khalar-ghor/2015/11/27/295033#sthash.BBQBbXvw.dpuf
শুরুতেই কত্ত কাণ্ডকীর্তি বিপিএল ‘থ্রি’কে ঘিরে! গায়ের জোরে নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলে স্টেডিয়ামে ঢুকে পড়া কিংবা খেলোয়াড় তালিকা নিয়ে অদ্ভুতুরে ঝামেলা সৃষ্টি-প্রথম দুই দিনেই অভাবিত দুটি কাণ্ড ঘটেছে বিপিএলের এবারের আসরে। মিরপুর ছাপিয়ে সারা দেশে প্লেগের মতো ছড়িয়ে পড়ছে ক্রিকেট-জুয়া। তবে এর মধ্যেও চলছে জমজমাট ক্রিকেট। অনেক মন্দের ভেতর সে ভালোটুকু দেখছেন সাইদুজ্জামান - See more at: http://www.kalerkantho.com/feature/khalar-ghor/2015/11/27/295033#sthash.BBQBbXvw.dpuf

No comments:

Post a Comment