এই শীতে মেহেরপুরের
দিগন্তজোড়া মাঠে চলছে সবজি চাষ,পরিচর্যা ও আহরণ। জেলার চাহিদা মিটিয়ে
প্রতিদিন ৬০ থেকে ৮০ ট্রাক সবজি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি
হচ্ছে। সবজি চাষ লাভজনক হওয়ায় এ জেলার চাষিরা ধান-পাট চাষের পরিবর্তে
ঝুঁকেছেন সবজি চাষের দিকে। আর সবজি চাষ করে এ জেলার চাষিরা তাদের ভাগ্য
ফিরিয়েছেন।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের
হিসেব মতে, মেহেরপুর জেলার আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ প্রায় ৬০ হাজার হেক্টর।
এর মধ্যে সারা বছরই প্রায় ৮ হাজার থেকে দশ হাজার হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ
থাকে। তবে শীত মৌসুমে সবচেয়ে বেশি সাড়ে ৫ হাজার থেকে ৭ হাজার হেক্টর জমিতে
নানা ধরনের সবজির আবাদ করে থাকেন জেলার চাষিরা।
অঞ্চল ভেদে জেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠে
বিভিন্ন সবজির উৎপাদন কম বেশি হলেও উল্লেখযোগ্য সবজি ফুলকপি, বাঁধাকপি,
মিষ্টি কুমড়া, লাউ, ঢেড়স, করল্লা, পটল, কাকরোল, মূলা-গাজর, শিম-বরবটি
লাল-শাক উৎপন্ন হচ্ছে। মেহেরপুর সদর উপজেলার পিরোজপুর, টুঙ্গি, কাঁঠালপোতা ও
সোনাপুর গ্রামের মাঠে পর্যাপ্ত শিম উৎপন্ন হচ্ছে। গাংনী উপজেলার সাহারবাটি
গ্রামের মাঠে ফুলকপি, বাঁধাকপি, পটল-করল্লা সদর উপজেলার শোলমারী, রাইপুর ও
খন্দকারপাড়া গ্রামের মাঠে লাল শাক, পুঁই শাক, আলমপুর, গোপালপুর ও
মদনাডাঙ্গা গ্রামের মাঠে লাউ, মিষ্টি আলু, মুজিবনগর উপজেলার গৌরীনগর,
সোনাপুর, বাগোয়ান ও আনন্দবাস গ্রামের মাঠে ব্যাপকহারে চাষ হচ্ছে ঢেঁড়স, শসা
ইত্যাদি। এসব সবজি মেহেরপুর জেলার চাহিদা মিটিয়ে ট্রাক যোগে বাইরের জেলায়
যাচ্ছে।
মেহেরপুর সদর উপজেলার টুঙ্গী গ্রামের শিম
চাষি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এবছরে তিনি সাড়ে ৭ বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছেন। এ
মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় শিমের উৎপাদন ভাল হয়েছে। এদিকে ভাল দাম
পাওয়ায় এলাকার শিম চাষিরা বেজায় খুশি। একই গ্রামের শিম চাষি হযরত আলী
জানালেন, প্রতিবিঘা জমির শিম চাষে প্রায় ২০ হাজার টাকা করে খরচ হলেও প্রতি
বিঘা জমির শিম প্রায় ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারবেন চাষি। একই গ্রামের
শিম চাষি মাসুদ বলেন, আগাম সবজি চাষ করে চাষিরা খুব বেশি লাভবান হতে পারেন।
গাংনীর সাহারবাটি গ্রামের সফল সবজি চাষি
তাহসেন আলী ও আইনাল হক জানান, তাদের এলাকার মাটি সবজি চাষের জন্য শতভাগ
খাঁটি। সবজি চাষ করে অল্প খরছে অধিক লাভ করা যায়। তাই যাদের নিজস্ব জমি
নেই; তারা লিজ নিয়ে জমি চাষ করছেন। একই গ্রামের চাষি রয়েল জানালেন, এ বছর
তিনি ৭ বিঘা জমিতে বাঁধাকপি, ২ বিঘা জমিতে ফুলকপি ও এক বিঘা জমিতে লাউ চাষ
করেছেন। এক বিঘা জমির কপি আবাদে তার ২০ হাজার টাকা খরচ হলেও তিনি পাচ্ছেন
প্রায় ৫০ হাজার টাকা। লাউ চাষে খরচ খুব কম। এতে প্রায় এক লাখ টাকার লাউ
বিক্রি করা যায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক
এসএম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ জেলার মাটি সবজি চাষের জন্য খুবই উপযুক্ত।
জেলা কৃষি বিভাগ চাষিদের সবজি চাষের ওপর প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাটি
মাঠ দিবসের ব্যবস্থা করে আসছে। নতুন নতুন সবজি আবাদে তাদের উদ্বুদ্ধ ও
প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
তথ্যসূত্র: http://bnstimes24.com
No comments:
Post a Comment