Pages

Saturday, December 26, 2015

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা এক পর্যটন কেন্দ্র মধুটিলা

ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্ত ঘেষা শেরপুর জেলার প্রায় ৩৫ কিলোমিটার সীমান্ত জুড়ে রয়েছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি গারো পাহাড়। এই গারো পাহাড়ে দেশের পার্বত্য এলাকার মতো সুউচ্চ পর্বত বা পাহাড় লেক না থাকলেও এখানকার শাল-গজারি, ইউকিলিপটাস-একাশিয়া, সেগুন-মেহগিনি, মিনঝিরিসহ নানা প্রজাতির গাছগালি ঘেরা ঊঁচু নিচু টিলা আর পাহাড়ি টিলা বেয়ে সমতলের দিকে ছুটে চলা ছোট ছোট ঝর্ণা, ঝোড়া ছড়া দিয়ে বয়ে যাওয়া পানির কলকল শব্দ যে কোন প্রকৃতি প্রেমির হৃদয়কে আন্দোলিত করবে।  ওই সব পাহাড়ি টিলার উপর এবং সমতলে শত শত বছর ধরে বসবাসকারী নৃ-গোষ্ঠির নানা সম্প্রদায়দের লোকদের সংস্কৃতি জীবন-জীবিকা পাহাড়ের সৌন্দর্যকে আরো বৃদ্ধি করেছে।

  পাহাড়ের চূড়ায় ওয়াচ টাওয়ারে দাড়িয়ে উচু-নিচু পাহাড়ের গায়- মেঘ-রোদ্দুরের খেলা আর সীমান্তের ওপারের ভারতীয় অধিবাসিদের ঘর-বাড়ি দৃশ্য মন ছুয়ে যায়, হৃদয়কে উদ্বেলিত করে।সেসঙ্গে এই গারো পহাড়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বেড়াতে আসা হাজার হাজার নর-নারী প্রেমিক-প্রেমিকার  মিলন মেলা হাট বসে।ময়মনসিংহ বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পরিবেশ বন মন্ত্রণালয়ের অধীনে বন অধিদপ্তরের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ১৯৯৯-২০০০ সালেমধুটিলা ইকো-পার্ক' (প্রথম পর্যায়ে) প্রকল্পের আওতায় ১০০ একর বনভূমিতে ইকো-পার্ক সৃজনের কাজ শুরু করা হয়। বর্তমানে মোট ৩৮০ একর জায়গা নিয়ে ইকো-পার্কটি গড়ে উঠেছে।মধুটিলা ইকো-পার্ক (প্রথম পর্যায়) প্রকল্পটি শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেমধুটিলা ইকো-পার্ক স্থাপিত (দ্বিতীয়)' নামে ২০০৬ সাল থেকে ইকো-পার্কের সৌন্দর্য বৃদ্ধি বিদেশী পর্যটকদের চিত্ত বিনোদন, সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণ, বিদ্যমান উদ্ভিদ প্রাণী বৈচিত্র্য সংরক্ষণ উন্নয়ন; মূল্যবান বিরল বিলুপ্ত প্রায় হুমকির সম্মুখীন উদ্ভিদ প্রজাতির বাগান জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণ, ইকো-ট্যুরিজম এর সুযোগ প্রদানের কাজ চলছে। বর্তমানে প্রকল্পের আওতায় ইকো-পার্ক এলাকায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন তথা প্রকল্প এলাকাকে আকর্ষণীয় করে গড়ে তুলে দেশী-বিদেশী দর্শনার্থীদের চিত্তবিনোদনের অধিকতর সুযোগ-সুবিধা প্রদানের কাজ ইতোমধ্যেই শুরু করা হয়েছে। প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ প্রায় শেষের দিকে।
মধুটিলা ইকো-পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, ইকো-পার্কের আকর্ষণীয় পর্যবেক্ষণ টাওয়ারটি থেকে পর্যটক গারো পাহাড়ের নৈসর্গিক দৃশ্যাবলী অবলোকনসহ ভারত মেঘালয় রাজ্যের অনুপম দৃশ্যাবলী অবলোকন করার বিপুল সুযোগ পাবেন।
মধুটিলা ইকোপার্ক ময়মনসিংহ বনবিভাগের ব্যবস্থানাধীন শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের মধুটিলা রেঞ্জের সমেশচূড়া বিটের বাংলাদেশ ভারত সীমান্তের গারো পাহাড় বিধৌত অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ঘেরা সমশেচূড়া এবং পোড়াগাঁও মৌজায় অবস্থিতপর্যটন সুবিধাদির মধ্যে আছে পনের একর শোভাবর্ধনকারী বিরল প্রজাতির বনায়ন। বিশ একর বনভূমিতে রয়েছে ঔষধি প্রজাতির বনায়ন, রেস্টহাউজ, বাসগৃহ। চার রুমবিশিষ্ট অত্যাধুনিক রেস্টহাউজ নির্মাণাধীন। বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর ভাস্কর্য বা প্রতিকৃতি হিসেবে রয়েছে ২টি হাত, ২টি বাঘ, মৎস্যকন্যা, ঈগল, হনুমান, প্যাঁচা, সাপ, কুমির, হরিণ, ক্যাঙ্গারু, ব্যাঙ, সিংহ। অবকাঠামোগত কাজের মধ্যে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, ১টি স্টার ব্রিজ, পাবলিক টয়লেট, বসার স্থান। লেকের পানিতে চরে বেড়ানো আর ব্যবহারের জন্য রয়েছে ৩টি প্যাডেল বোট ৫টি দেশীয় নৌকা। বর্তমানে ইকোপার্কটি দর্শনার্থী-পর্যটকদের জন্য š§ুক্ত রয়েছে। বিনা পয়সায় পর্যটন কেন্দ্রটি ঘুরে বেড়ানোর জন্য প্রতিনিয়তই ভিড় বাড়ছে। কোলাহলমুক্ত শান্ত পরিবেশে এসে অনেকেই উপভোগ করছে অনাবিল আনন্দ। শহরের কোলাহল ছেড়ে প্রতিদিন ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে ভ্রমণ পিপাসুরা আসছে লোভনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকনে। ঘুরে বেড়াচ্ছে পাহাড়ের পর পাহাড়। চিত্তবিনোদনের জন্য রয়েছে বিশাল পরিসর।
মধুটিলা ইকোপার্ক গেটের বাঁদিকের রাস্তা দিয়ে যেতে হবে পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে। পাহাড়ের উঁচু টিলায় নির্মাণ করা হয়েছে এটি। পর্যবেক্ষণ টাওয়ারের উপর দাঁড়িয়ে উপভোগ করবেন প্রকৃতির মজা, নিস্তব্ধ-নীরবতা। যেন এক নিথর বাতায়ন। সর্বত্রই যেন সবুজের রাজ্য। দেখবেন সামান্য দূরে অবস্থিত ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুড়া পাহাড়। মূল্যবান বিরল উদ্ভিদ। ইকোপার্কের প্রধান ফটক পেরুতেই চোখে পড়বে বন্যপ্রাণী হাতির ভাস্কর্য। যেন বাস্তবরূপে দাঁড়িয়ে আছে। কয়েক পা বাড়ালেই চোখে পড়বে লেকের কোণে কুমারী মৎস্যকন্যা আর লেকে বেড়ানোর পানিতে ৩টি প্যাডেল বোট ৫টি দেশীয় নৌকা। পাহাড়ি ঝরনাধারার পানি এসে মিশেছে লেকের পানিতে। কালভার্টের ডানে রয়েছে হালকা নাস্তা চা-কফিসহ স্টেশনারি সামগ্রীর দোকান। একটু এগোলেই মনোরম স্টার ব্রিজ, যা লেকের পানির উপর নির্মিত। একসঙ্গে শতাধিক লোক দাঁড়িয়ে-বসে উপভোগ করা যায় বনভোজনের আড্ডা। পাশেই রয়েছে কৃত্রিম কুমির। দেখতে বাস্তব মনে হবে। এরপর বিস্তর এলাকায় ক্ষণে ক্ষণে চোখে পড়বে বিভিন্ন পশুপাখির ভাস্কর্য। স্থানে স্থানে রয়েছে বসার স্থান। উঁচু পাহাড় কেটে ঢালু রাস্তা তৈরি করা হয়েছে রেস্টহাউজে যেতে। প্রাইভেট-মাইক্রো চলার উপযোগী খাঁজকাটা পাকা রাস্তার মাঝের সারিতে রয়েছে নানা রঙের পাথর বসানো এক শিল্পকর্ম যাতে পা পিছলে না যায়। আর উপর-নীচ থেকে দাঁড়ালে মনে হবে বাহারি ফুলের সারি। দুপাশে রয়েছে জীববৈচিত্র্যের প্রতিকৃতি। ভাস্কর্যগুলো দেখলে মনে হবে যেন শিল্পীর হাতের নিখুঁত চিত্র। রেস্টহাউজের বাঁকা সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে উপভোগ করা যায় প্রকৃতির মনোমুগ্ধ পরিবেশ। উঁচু-নীচু পাহাড়গুলোর দিকে তাকালে মনে হবে পানির ঝরনাধারা আর এরই নিচে রয়েছে লেক। আসলে সেগুলো পাহাড়ে ওঠার রাস্তা। কিছুদূর ঘুরে এসে বিশ্রাম করুন রেস্টহাউজে। উপভোগ করুন রেস্টহাউজের আধুনিক সুযোগ সুবিধা। তারপর খাওয়া-দাওয়া সেরে আবার বেরিয়ে পড় পাহাড় থেকে পাহাড়, অন্য পাহাড়ে। জীববৈচিত্র্য, বন্যপ্রাণীর ভাস্কর্য আর প্রকৃতির সঙ্গে মিতালী করে ক্যামেরায় ছবি তুলুন চেনা অতীতকে স্মৃতি করে। ফেরার পালায় সময় পেলে যেতে পারেন নিকটবর্তী বারমারি মিশন বা খ্রিস্টান মিশনে। এটিও জেলার আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিত। আবার মধুটিলার অতি নিকটেই রয়েছে বৃহত্তর জেলার অন্যতম পর্যটক কেন্দ্র গজনী অবকাশ কেন্দ্র, যা ইতিমধ্যেই সারাদেশে অত্যাধুনিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। মধুটিলা ইকো-পার্কে ওজু নামাযের কোন ব্যবস্থা না থাকায় দুর্ভোগের কথা জানিয়েছে পর্যটকরা। পাশাপাশি খাবার নিরাপদ পানির সংকট পুরো ইকো-পার্ক জুড়েই। ব্যাপারে পর্যটকরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদিও নানা সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করেছেন। তবে কর্তৃপক্ষ দর্শনার্থীরা প্রচন্ডভাবে আশা ব্যক্ত করেছেন যে, নিঃসন্দেহে মধুটিলা ইকো-পার্ক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। 
  - See more at: http://www.touristguide24.com/details.php?id=2288#sthash.5ygHQGNe.dpuf



ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্ত ঘেষা শেরপুর জেলার প্রায় ৩৫ কিলোমিটার সীমান্ত জুড়ে রয়েছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি গারো পাহাড়। এই গারো পাহাড়ে দেশের পার্বত্য এলাকার মতো সুউচ্চ পর্বত বা পাহাড় ও লেক না থাকলেও এখানকার শাল-গজারি, ইউকিলিপটাস-একাশিয়া, সেগুন-মেহগিনি, মিনঝিরিসহ নানা প্রজাতির গাছগালি ঘেরা ঊঁচু নিচু টিলা আর পাহাড়ি টিলা বেয়ে সমতলের দিকে ছুটে চলা ছোট ছোট ঝর্ণা, ঝোড়া ও ছড়া দিয়ে বয়ে যাওয়া পানির কলকল শব্দ যে কোন প্রকৃতি প্রেমির হৃদয়কে আন্দোলিত করবে।  ওই সব পাহাড়ি টিলার উপর এবং সমতলে শত শত বছর ধরে বসবাসকারী নৃ-গোষ্ঠির নানা সম্প্রদায়দের লোকদের সংস্কৃতি ও জীবন-জীবিকা পাহাড়ের সৌন্দর্যকে আরো বৃদ্ধি করেছে। পাহাড়ের চূড়ায় ওয়াচ টাওয়ারে দাড়িয়ে উচু-নিচু পাহাড়ের গায়- মেঘ-রোদ্দুরের খেলা আর সীমান্তের ওপারের ভারতীয় অধিবাসিদের ঘর-বাড়ি’র দৃশ্য মন ছুয়ে যায়, হৃদয়কে উদ্বেলিত করে।সেসঙ্গে এই গারো পহাড়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বেড়াতে আসা হাজার হাজার নর-নারী ও প্রেমিক-প্রেমিকার  মিলন মেলা ও হাট বসে। - See more at: http://www.dainikdhakareport.com/tourism-news/2015/06/21/28942#sthash.wPsEETyP.dpuf

No comments:

Post a Comment