পড়ন্ত বিকেলে ঢাকা
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পরিণত হয়
সর্বস্তরের মানুষের মিলনমেলায়। আজও তার
ব্যতিক্রম হয়নি বরং সাপ্তাহিক ছুটির
দিন হওয়ায়
ভিড় একটু
বেশি। শহীদ
মিনারে ঢুকতে
গেটে চোখে
পড়ে বড়
দুটি সাইনবোর্ড।
একটিতে বাংলাদেশ
সুপ্রিমকোর্ট কর্তৃক প্রদত্ত জনসাধারণের প্রতি
শহীদ মিনারে
জুতা নিয়ে
প্রবেশে নিষেধাজ্ঞাসহ
অবস্থানকালে তাদের আচরণসংক্রান্ত নির্দেশাবলী। পূর্ত
মন্ত্রণালয়কে মিনারের নিরাপত্তার জন্য ৩
জন নিরাপত্তাকর্মী
এবং সিটি
কর্পোরেশনকে ৩ জন পরিচ্ছন্নকর্মী নিয়োগ
দেয়ার নির্দেশ
রয়েছে। অন্য
সাইনবোর্ডে শহীদ মিনারের ভাবগাম্ভীর্য ও
মর্যাদা রক্ষার
জন্য জনসাধারণের
প্রতি ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি রয়েছে।
এই নির্দেশগুলো
কতটুকু মানা
হচ্ছে তা
জানতে শহীদ
মিনারে প্রবেশ
করি।
শহীদ মিনারে প্রবেশ
করে যে
চিত্র চোখে
পড়ল তাতে
কিছু সময়ের
জন্য ভুলে
গেলাম এটা
মহান ভাষা
আন্দোলনে প্রাণ
দেয়া ভাষা
শহীদদের শ্রদ্ধার্থে,
তাদের প্রতি
সম্মান জানানোর
জন্য নির্মিত
মিনার। ঢোকার
মুখে কয়েকজন
তরুণ আড্ডা
দিচ্ছেন, সঙ্গে
সিগারেট টানছেন।
আশপাশে অনেক
দর্শনার্থী চোখে পড়ে যাদের সবাই
জুতা পায়ে
মূল বেদিতে
ঘোরাফেরা করছেন।
শহীদ মিনারের
সিঁড়িতে ছোট
একটি সাইনবোর্ডে
লেখা রয়েছে,
মূল বেদিতে
জুতা পায়ে
প্রবেশ নিষেধ।
কিন্তু তার
তোয়াক্কা না
করে সেই
সাইনবোর্ডের পাশে বসে কয়েকজন তরুণ
দিব্যি আড্ডা
দিচ্ছেন। মিনারের
উত্তর পাশ
পরিণত হয়েছে
খেলার মাঠে।
কয়েকজন শিশু
এখানে ক্রিকেট
খেলছে। পাশে
তাদের অভিভাবক
দাঁড়িয়ে কথা
বলছেন। এদিকের
ঘাসের উপর
দলে দলে
বিভক্ত হয়ে
আড্ডা দিচ্ছেন
কয়েকজন। মিনারের
দক্ষিণ পাশে
মধ্যবয়স্ক কয়েকজন খোশগল্পে মত্ত। তারাও
জুতা পায়ে
অবস্থান করছেন।
মিনারের নিচের
অংশটা দেখে
মনে হল
এই জায়গাটা
প্রেমিক-প্রেমিকাদের
জন্য বরাদ্দ।
কয়েকজন প্রেমিক-প্রেমিকাকে চোখে
পড়ে যারা
আপত্তিকর অবস্থায়
বসে আছে।
আমি জুতা
হাতে ঘুরছি
তা দেখে
কয়েকজন কটাক্ষ
করে হাসছেন।
মিনারের উত্তর
পাশের গেট
দিয়ে ২টি
মোটরসাইকেলযোগে ৬ জন তরুণ প্রবেশ
করে। মিনারের
সিঁড়ির কাছে
মোটরসাইকেল পার্ক করে জুতা পায়ে
ভেতরে চলে
যায়। পাশের
দেয়ালের ওপর
এক ভবঘুরে
ঘুমাচ্ছে। কয়েকটা কুকুর ঘোরাফেরা করছে।
মিনারে কোনো
নিরাপত্তা প্রহরী চোখে পড়েনি। তবে
উত্তর দিকের
রাস্তায় একটি
পুলিশ ভ্যান
ও কয়েকজন
পুলিশ সদস্য
চোখে পড়ে।
পুরো শহীদ মিনার
এলাকা নোংরা
আর অপরিচ্ছন্ন।
এত মানুষের
জুতার ধুলো
আর নিয়মিত
পরিষ্কার না
করায় মাটির
পুরো স্তর
জমে গেছে।
গাছের পাতা
আর মাটি
মিশে একাকার।
বেদির দু’পাশে বাদামের
খোসা, সিগারেটের
পরিত্যক্ত প্যাকেট, চিপস, বিস্কিটের প্যাকেট,
চা- কফির
কাপসহ বিভিন্ন
খাবারের উচ্ছিষ্ট
অংশ পড়ে
থাকতে দেখা
যায়। মূল
বেদির নিচের
জায়গাটুকুও বাদামের উচ্ছিষ্টাংশ ফেলে নোংরা
করে ফেলা
হয়েছে। দুর্গন্ধে
এখানকার বাতাস
দূষিত হয়ে
গেছে। দুর্গন্ধের
উৎস খুঁজতে
বেদির পেছনের
অংশে গিয়ে
দেখতে পাই
এখানে মানুষের
মলসহ বিভিন্ন
ধরনের ময়লা-আবর্জনার ডাস্টবিনে
পরিণত হয়েছে।
পেছনের দেয়ালে
বসে কয়েকজন
তরুণ সিগারেটের
সাধ্যমে গাঁজা
সেবন করছে।
মাদকের ব্যাপারে
কথা বলি
এখানকার চা
বিক্রেতা আবদুল
মালেকের সঙ্গে।
৪ বছর
ধরে এখানে
ব্যবসা করা
এই বিক্রেতা
জানান, সারা
দিনই এখানে
মাদকসেবীদের দেখা যায়। তারা সাধারণত
বেদির পেছনের
অংশে বসে
গাঁজা সেবন
করে। গাঁজা
আসে কোথা
থেকে এমন
প্রশ্নের জবাবে
তিনি জানান,
শহীদ মিনারের
পেছনের যে
মাজার রয়েছে
সেখানে কাজ
করেন এমন
কয়েকজন লোক
এখানে নিয়মিত
গাঁজা বিক্রি
করে। তিনি
আরও জানান,
রাত গভীর
হলে এখানে
নিয়মিত পতিতাবৃত্তি
চলে।
এবার কথা বলি
শহীদ মিনার
দেখতে এসছেন
এমন কয়েকজনের
সঙ্গে। সরকারি
বাংলা কলেজ
থেকে আসা
কয়েকজন শিক্ষার্থীর
কাছে জানতে
চাই জুতা
নিয়ে শহীদ
মিনারে আসা
যায় না
এটা তারা
জানেন কিনা।
উত্তরে তারা
বলেন, শহীদ
মিনারে জুতা
নিয়ে প্রবেশ
করা উচিত
নয় সেটা
তারা জানেন
কিন্তু সবাই
জুতা নিয়ে
আসে তাই
তারাও এসেছেন।
খেলতে থাকা
কয়েকজন শিশুর
কাছে জানতে
চাই তারা
শহীদ মিনার
সম্পর্কে কিছু
জানে কিনা।
আশ্চর্যের বিষয় তারা এর ইতিহাস
জানেই নয়,
এমন কি
এটার নাম
যে শহীদ
মিনার তাও
জানে না।
তারা আরও
জানায়, প্রতি
সপ্তাহেই এখানে
বাবা-মায়ের
সঙ্গে খেলতে
আসে। অর্থাৎ
বাবা-মা
তাদেরকে প্রতি
সপ্তাহে এখানে
নিয়ে এলেও
শহীদ মিনার
সম্পর্কে কোনো
দিন কোনো
কিছু বলার
প্রয়োজন মনে
করেননি। তাদের
কাছে শহীদ
মিনার পরিচিতি
পেয়েছে কেবল
খেলার মাঠ
হিসেবে। বসে
আড্ডা দিচ্ছে
এমন একটি
গ্র“পের
সঙ্গে শহীদ
মিনারে জুতা
নিয়ে প্রবেশের
ব্যাপারে প্রশ্ন
করলে তারা
উল্টো আমাকে
প্রশ্ন করে
জুতা নিয়ে
প্রবেশ করলে
কি সমস্যা
হয়। তাদের
মতে সমস্যা
হলে তো
এখানে নিরাপত্তা
প্রহরী থাকত।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত
নামছে। নামছে
কালো অন্ধকার।
মিনারকে ঘিরে
মানুষের আচরণও
কালো হয়ে
উঠছে। এতক্ষণ
পুরো শহীদ
মিনার এলাকায়
যেসব অসঙ্গতিগুলো
চোখে পড়ল
তাতে এটা
স্পষ্ট, শহীদ
মিনারের প্রতি
শ্রদ্ধাবোধ অনেকেরই মাঝে আর নেই।
এটা কারও
আছে কেবল
আড্ডার জায়গা,
কারও কাছে
প্রেম করার,
আবার কারও
কাছে খেলার,
কারও কাছে
মাদক গ্রহণের
নিরাপদ স্থান।
কেবল সাধারণ
মানুষ নয়,
শহীদ মিনারের
রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষও যে
এ ব্যাপারে
উদাসীন তা
তাদের কর্মকাণ্ডে
সুস্পষ্ট। ৩ জন নিরাপত্তা কর্মী
ও ৩
জন পরিচ্ছন্ন
কর্মী নিয়োগের
জন্য সুপ্রিমকোর্ট
২ বছর
আগে নির্দেশ
দিলেও তা
এখনও বাস্তযায়িত
হয়নি। এখনই
কোনো ব্যবস্থা
না নিলে
শহীদ মিনার
হয়তো একদিন
একটি বিনোদন
পার্কে রূপ
নেবে।
See more at:
http://www.jugantor.com/protimoncho/2014/01/21/60960#sthash.4I4e02j4.dpuf
পড়ন্ত
বিকেলে ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পরিণত হয় সর্বস্তরের মানুষের মিলনমেলায়।
আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি বরং সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় ভিড় একটু বেশি।
শহীদ মিনারে ঢুকতে গেটে চোখে পড়ে বড় দুটি সাইনবোর্ড। একটিতে বাংলাদেশ
সুপ্রিমকোর্ট কর্তৃক প্রদত্ত জনসাধারণের প্রতি শহীদ মিনারে জুতা নিয়ে
প্রবেশে নিষেধাজ্ঞাসহ অবস্থানকালে তাদের আচরণসংক্রান্ত নির্দেশাবলী। পূর্ত
মন্ত্রণালয়কে মিনারের নিরাপত্তার জন্য ৩ জন নিরাপত্তাকর্মী এবং সিটি
কর্পোরেশনকে ৩ জন পরিচ্ছন্নকর্মী নিয়োগ দেয়ার নির্দেশ রয়েছে। অন্য
সাইনবোর্ডে শহীদ মিনারের ভাবগাম্ভীর্য ও মর্যাদা রক্ষার জন্য জনসাধারণের
প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি রয়েছে। এই
নির্দেশগুলো কতটুকু মানা হচ্ছে তা জানতে শহীদ মিনারে প্রবেশ করি। - See
more at:
http://www.jugantor.com/protimoncho/2014/01/21/60960#sthash.4I4e02j4.dpuf
পড়ন্ত
বিকেলে ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পরিণত হয় সর্বস্তরের মানুষের মিলনমেলায়।
আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি বরং সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় ভিড় একটু বেশি।
শহীদ মিনারে ঢুকতে গেটে চোখে পড়ে বড় দুটি সাইনবোর্ড। একটিতে বাংলাদেশ
সুপ্রিমকোর্ট কর্তৃক প্রদত্ত জনসাধারণের প্রতি শহীদ মিনারে জুতা নিয়ে
প্রবেশে নিষেধাজ্ঞাসহ অবস্থানকালে তাদের আচরণসংক্রান্ত নির্দেশাবলী। পূর্ত
মন্ত্রণালয়কে মিনারের নিরাপত্তার জন্য ৩ জন নিরাপত্তাকর্মী এবং সিটি
কর্পোরেশনকে ৩ জন পরিচ্ছন্নকর্মী নিয়োগ দেয়ার নির্দেশ রয়েছে। অন্য
সাইনবোর্ডে শহীদ মিনারের ভাবগাম্ভীর্য ও মর্যাদা রক্ষার জন্য জনসাধারণের
প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি রয়েছে। এই
নির্দেশগুলো কতটুকু মানা হচ্ছে তা জানতে শহীদ মিনারে প্রবেশ করি। - See
more at:
http://www.jugantor.com/protimoncho/2014/01/21/60960#sthash.4I4e02j4.dpuf
No comments:
Post a Comment