ফুল ভালবাসে সবাই। যে কোন ফুলের সৌন্দর্য
মনের ক্ষুধা মেটায়। যে কোন পরিবেশকে সুন্দর করে মন প্রশান্তিতে ভরে দেয়।
নিরন্তর ফুলের শোখা দেখে মনে হয় দীর্ঘ এক স্বপ্ন দেখতে দেখতে পার করে দেই
পৃথিবীর জীবন। কিন্তু না। অপার্থিব অনুভূতির মত পার্থিব জীবন নয়। দেহের
মধ্যে বাসা বাধে নানা রকম অসুখ বিসুখ। স্বপ্ন প্রশান্তি তখন ধীরে ধীরে
ভাঙ্গতে শুরু করে। কোন কোন সময় সে অবস্থায় সুন্দর ফুল আর পৃথিবীকে বড্ড
কুৎসিত মনে হয়।
কিন্তু ফুলের সৌন্দর্যের মত অনেক ফুল গাছের মধ্যেই রয়েছে আর
এক মহা সুন্দর- সেসব গাছের ভষজ গুণ। এসব ফুলগাছ আঙিনায় রেখে একদিকে যেমন
পেতে পারি স্বর্গের আনন্দ অন্যদিকে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন পরিবেশ সম্মতভাবে
সারিয়ে তুলতে পারি আমাদের অসুখগুলো। প্রাথমিক চিকিৎসা তো বটেই-
ক্যান্সারের মত কঠিন রাগও সারিয়ে তুলতে পারি ফুল গাছ দিয়ে। হঠাৎ শরীরে কোথাও কেটে গেলে গাঁদা ফুলের
পাতার রস অব্যর্থ। পাতা ঘষে বা বেঁটে সে কাটা জায়গায় প্রলেপ দিলে তৎক্ষণাৎ
রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়, ব্যথা কমে যায় ও তাড়াতাড়ি জোড়া লাগে। পাতার রস দিয়ে
ঘা দুয়ে দিলে দ্রুত তা সেরে যায়। গাঁদা ফুলের পাঁপড়ি সামান্য মাখনের সাথে
মিশিয়ে অল্প পরিমাণে কয়েকদিন খেলে অর্শের রক্ত পড়া বন্ধ হয়। প্রসাব কম হলে বা কষ্ট পেলে অপরাজিতা গাছের
শিকড়ের ছাল পানিতে সিদ্ধ করে দু’চার দিন খেলেই এ অসুবিধা চলে যাবে। সহজ
প্রসবের জন্য সাদা অপরাজিতার শিকড় বাঁটা ১ গ্রাম পরিমাণ খাওয়ালে উপকার
পাওয়া যেতে পারে। আর নীল অপরাজিতার শিকড় এক চামচ ঘি, মধু বা চিনির সঙ্গে
খেলেই অবশ্যই শুক্র রোগ সেরে যাবে এবং শুক্র বৃদ্ধি হবে। ঠান্ডা লেগে চোখ
দিয়ে পানি পড়েতে থাকলে বা চোখে জালা যন্ত্রণা হলে নীল অপরাজিতার বীজ গুঁড়ো
করে ২ গ্রাম পরিমাণ নিয়ে তাতে সামান্য চুন মিশিয়ে গরম দুধ বা পানি দিয়ে
রাতে শোয়ার আগে খেতে হবে। নীল অপরাজিতার শিকড় বাঁটা খেলে বাত রোগে উপকার
পাওয়া যায়। বকফুলের গাছ থেকে এক ধরনের আয়ুর্বেদিক তেল
তৈরি করা হচ্ছে। এ তেল ব্যবহারে গণোরিয়া রোগে সুফল পাওয়া যায়। বুকে সর্দি
বসলে এক চা চামচ পরিমাণ বকফুলের রস দিনে ৩ বার খেলে বসে যাওয়া সর্দি নরম
হয়ে বেরিয়ে আসে। নাকে এলার্জি অর্থাৎ বার বার হাঁচি আসে, নিচু হলেই নাক
দিয়ে পানির মত সর্দি গড়িয়ে পড়ে। এরূপ হলে পাতার টাটকা রস ২ চা চামচ পরিমাণ
হালকা গরম করে খেলে উপকার পাওয়া যায়। এ ছাড়া নাকের ছিদ্রে তিন ফোঁটা করে
পাতার ঠান্ডা রস দিলে পানির মত সর্দি পড়া বন্ধ হবে। বকফুলে আছে প্রচুর
ভিটামিন এ বা ক্যারোটিন। তাই রাতকানা রোগ হলে ফুল ভাজা নিয়মিত খেলে বা
টাটকা পাতার রস ঘি দিয়ে গরম করে রোজ সকালে ১ চা চামচ খেলে উপকার পাওয়া যায়।
গরম শিশিতে রেখে বহুদিন তা ব্যবহার করা যায়।যে কোন সর্দি কাশি হলে জবা গাছের ৩-৪ গ্রাম
টাটকা শিকড় পরিষ্কার করে পানি দিয়ে বেঁটে তার আধা কাপ ঠান্ডা পানিতে
মিশিয়ে পর পর তিনদিন রোজ সকাল বিকালে খেলে তা সেরে যায়। টাক পোকায় অনেক সময়
চুল গোড়া থেকে কেটে দেয়। সেখানে নতুন চুল গজালেও তা খেতে থাকে। এ অবস্থায়
জবা ফুল বেঁটে গোসলের পর ভিজে চুল শুকিয়ে গেলে ঐ জায়গায় লাগায়ে কয়েকদিন
প্রয়েপ দিলে এ অসুবিধা সেরে যায়। অতিরিক্ত ঋতুস্রাব কমাতে ৫-৭ টি জবাফুল
সামান্য ঘি দিয়ে ভেজে খেলে তা নিয়ন্ত্রিত হয়। চোখ ওঠা সারাতে জবা ফুল বেঁটে
চোখের উপর এবং নীচের পাতায় প্রলেপ দিলে উপকার পাওয়া যায়।গাছের কচি পাতার টাটকা রস চোখে দিলে চোখ
ওঠায় আরাম পাওয়া যায়। দিনে দু’বার দিতে হবে। আঘাত লেগে ফুলে গেলে ৫০ গ্রাম
কচি পাতা কুচি কুচি করে কেটে মাটির পাত্রে ১০০ মিলিলিটার পানি দিয়ে সিদ্ধ
করে পানি কাইয়ের মত হলে তা সহ্যমত গরম অবস্থায় কয়েকদিন ফোলা জায়গা লাগালে
ফোলা কমে যায়। বিছে, মৌমাছি, বোলতা, ভীমরুল কামড়ালে কচি পাতা সিদ্ধ করে তার
পানি দিয়ে কামড়ানো জায়গা ধুয়ে দিলে সেখানকার বিষ নষ্ট হয়, ফোলা যন্ত্রনাও
কমে যায়। খোস পাঁচড়া সারাতে ব্যবহার করা হয় গাছের ছাল বাটা রস। করবীর শিকড়
দুধ দিয়ে বেঁটে গোসলের তিনঘণ্টা আগে মাথায় মাখলে অকালে চুল পাকা বন্ধ হয়ে
যায়।দীর্ঘদিন ধরে ঘা কমছে না। সে ক্ষেত্রে ৫
গ্রাম টাটকা পাতা সামান্য পানি দিয়ে বেটে ৩০ মিলি পরিমাণ জ্বাল দেয়া গরুর
দুধে মিশিয়ে দিনে একবার খেতে হবে। এছাড়া তাজা পাতা বেঁটে ঘায়ে লাগিয়ে শুকনো
পাতলা কাপড় দিয়ে বেঁধে দিলে তা সেরে যায়। এ সময় লবণ না খাওয়াই ভাল। দাঁতের
মাড়ির ক্ষতে পাতাসহ ডাঁটা ১০-১২ গ্রাম বেঁটে ক্বাথ তৈরি করে ১০-১৫ মিনিট
মুখে নিয়ে বসে থাকলে ধীরে ধীরে তা সেরে যায়। দিনে ২-৩ বার এভাবে মুখে রেখে
কুলি করলে উপকার পাওয়া যায়। সাদা আমাশয় সারাতে লজ্জাবতীর পাতাসহ ডাঁটা ১০
গ্রাম ১ গ্লাস পানিতে সিদ্ধ করে ২-৩ দিন রোজ সকাল সন্ধ্যায় ছেঁকে সে পানি
পান করলে উপশম পাওয়া যায়। হাত পায়ের জ্বালা যন্ত্রণা কমাতে শিকড়সহ গাছ ১০
গ্রাম পরিমাণ ৪ কাপ পানিতে জ্বাল দিতে দিতে যখন পানি ১ কাপের মত হবে তখন তা
নামিয়ে ঠান্ডা করে ছেঁকে খেতে হবে।
No comments:
Post a Comment