বাংলাদেশের
চারদিকে সবুজের
সমারোহ,
বয়ে
যাওয়া
নদীর
কলতান,
পাখির
কলকাকলী
পাহাড়-পর্বত সব কিছু মিলিয়ে প্রকৃতি অপার এক মহিমা বিরাজ করছে আামাদের এইভূ-খন্ডে । প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এবং
ছোট ছোট পাহাড়, টিলা,
অরণ্য বেষ্টিত সিলেট স্ব-মহিমায়
উদ্ভাসিত। সুরমা,
কুশিয়ারা, পিয়াইন, সারি নদীর অপরুপ
সৌন্দর্য সিলেটকে বাংলাদেশের মানুষের কাছে আলাদাভাবে পরিচিতি
দিয়েছে।
বাংলাদেশের
এমন অনেক জায়গা আছে
যেখানে রয়েছে নদী এবং
পাহাড়ের মিলন মেলা।
দু’চোখ সৌন্দর্য দেখতে
দেখতে ক্লান্ত হয়ে যাবেন কিন্তু
সৌন্দর্য শেষ হবে না
লালাখালের। লালা
খালকে নদী বললে ভুল
হবে না। কেননা
পিয়াইন নদীকে যদি নদী
বলা যায় তবে লালাখালকেও
নদী বলা বাঞ্ছনীয়।
সেই
পরিচিতির অন্যতম অলংকার সারি
নদি হয়ে পৌঁছা লালাখাল। সারি
নদীর স্বচ্ছ জলরাশির উপর
দিয়ে নৌকা অথবা স্পীডবোটে
করে আপনি যেতে পারেন
লালাখালে। ৪৫
মিনিট যাত্রা শেষে আপনি
পৌঁছে যাবেন লালাখাল চা
বাগানের ফ্যাক্টরি ঘাটে। চেরাপুঞ্জি
পাহাড় থেকে উৎপন্ন এই
নদী বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত। প্রাকৃতিক
সৌর্ন্দযের এক অপরুপ নিদর্শন
লীলাভূমি লালাখাল। নদী
আর পাহাড়ের মেলবন্ধন। নদীর
টলটলে স্রোতস্বীনি পানি আর পাহাড়ের
গা বেয়ে নেমে আসা
ঝর্ণাধারা, এ যেন প্রকৃতির
এক মায়াময়ী রুপ সৌন্দর্য।
নদির পানিতে নৌকার গলুইয়ের
উপর বসে পাহাড় দেখার
সৌন্দর্যই আলাদা। ছোট
এ নদির পানি নজরকাড়া। না
দেখলে বুঝানো যাবে না
সৌন্দের্যের সেই অপরুপ বাহার। খালের
যেখানেই শুরু সেখানেই চা
বাগান। এর
পরই ভারতের সীমান্ত।
খালের অপরূপ রূপকে উপভোগ
করতে হলে নৌকায় ভ্রমন
করার কোন বিকল্প নেই। দল
বেধেঁ সেখানে গেলে সুবিধা
বেশি কারণ নৌকার ভাড়া
বেশি নয়। জন
প্রতি ১০ টাকা, ভ্রমনে
আনন্দও উপভোগ করা যায়
এবং সকলে মিলে হৈ-চৈ করে আনন্দ
ভাগাভাগি করা যায়।
লালাখালকে কেন লালাখাল বলা
হয় জানা যায়নি।
নৌকার মাঝির কাছ থেকেও
এর কোন ব্যখ্যা উদ্ধার
করা যায়নি। নদীর
পানির রং নীল । পানি স্থির নয়ঁ,
সব সময় চলমান।
কেননা পাহাড় থেকে সবসময়
পানি গড়িয়ে পড়ছে।
কিন্তু আছে অনেক রকমের
গাছপালার অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। যেন
চারপাশে সবুজের হাতছানি।
মাঝেঁ মাঁঝে কাঁশবনের ঝোপ
চোখে পড়ে। তবে
নদীতে অসংখ্য বাঁকের দেখা
মেলে। প্রতিটি
বাঁকই দেখার মত সুন্দর। নদীতে
স্রোত থাকায় যাওয়ার পথে
সময় বেশি লাগে আসার
পথে কম। নদীর
পানি নীল কেন বোঝা
মুশকিল। পানি
ঘোলা হয়ে যে নীল
হয়েছে তাও কিন্তু নয়। এরপরও
এ নদীর পানি নীল। তাই
নদীর পানি নিয়ে যে
মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক। এ
নদীর পানি নীল কিন্তু
নাম কেন লালাখাল হল-
এমন প্রশ্ন অনেক পর্যটকের। হতে
পারে নীলা খাল।
মিশরের নীল নদ দেখা
হয়নি। তবে
এ খাল দেখে মনে
হয়, নীলাভ পানির লালাখাল
যেন সিলেটের নীল নদ।
লালাখালের দুই পাড়ে তেমন
কোন বাড়ি-ঘর নেই। নদী
থেকে দূরে পাহাড় দেখা
যায়। দেখলে
যতটা কাছে মনে হয়
আসতে তত কাছে না। পাহাড়গুলোকে
দেখলে মনে হয় কেউ
যেন নিজ হাতে থরে
থরে একের পর একটি
করে সাজিয়ে রেখেছে।
এখানে পাহাড়ের গায়ে মেঘ জমা
হয়। উপরে
আলোকিত আকাশ। ক্লান্ত
সূর্য ঢলে পড়ছে পশ্চিম
আকাশে। চারপাশে
গাছপালার মাঝে পাখির কিচিরমিচির। এসব
দেখলে মনে হয় পাহাড়
থেকে তির তির সন্ধ্যা
নেমে আসছে। ধীরে
ধীরে গোধুলীকেও আধাঁর ঢেকে দেয়। ক্রমে
চারপাশে নেমে আশে আঁধার। সন্ধ্যার
আঁধার নেমে আসে লালাখালের
স্বচ্ছ নীল জলে। একটু কাছ থেকে
দেখা যায় মেঘেরা দল
বেধেঁ পাহাড়ের গায়ে ঠেস লাগিয়ে
থেমে থাকে। আবার
কখনো দুই পাহাড়ের মাঝ
খান দিয়ে সবার অলক্ষ্যে
হারিয়ে যায়। কখনো
মেঘ বেশি জমা হলে
এখানে বৃষ্টিপাত বেড়ে যায়।
মাঝে মাঝে দু-একটি
ঘাটে একাধিক পল্লী বধূকে
দেখা যায়। কাঁখে
কলসীতে করে পানি নিয়ে
যাচ্ছে। কেউ
বা গোসল করতে নদীতে
নেমে নীল জলে গা
জুড়াচ্ছে। গ্রামীণ
আবহ বিদ্যমান। নদীতে
আসা গায়ের বধূদের দেখলে
মনে হয় তারা বেশ
দূর থেকেই এসেছে।
লালাখালের সূর্য ডুবির দৃশ্য
অপরূপ। নীল
পানির ভেতর ডুবে যাচ্ছে
লাল থেকে পরে সোনালী
হয়ে যাওয়া সূর্য এমন
দৃশ্য যে কাউকে মুগ্ধ
করে। পাহাড়
থেকে নেমে আসা এক
সময় পর্যটকদের ঘিরে ফেলে।
নৌকায় থাকলে মনে হয়
আস্তা নৌকাটাই গিলে ফেলেছে অন্ধকার। লালাখালে
যেতে হলে, সিলেট নগরীর
ধোপাদিধীর দক্ষিণপারস্থ ওসমানী শিশু উদ্যানের
(শিুশু পার্ক) সামনে থেকে
টেম্পু, লেগুনা অথবা জাফলংয়ের
বাসে যেতে হবে সারিঘাট। তাই
পাড়ি দিতে হবে ৩৫
কি.মি. রাস্তা তার
পরেই ফিরে পাওয়া যাবে
প্রাকৃতির অপরুপ স্বপ্নের লালাখাল
যা অনেকের কাছে মিশরের
নীল নদ নামে পরিচিত
।
No comments:
Post a Comment