Pages

Tuesday, January 12, 2016

অপরুপ লীলাভূমি ও দেশের একমাত্র কুমির প্রজনন কেন্দ্রে সুন্দরবন।

বাংলাদেশের চারদিকে সবুজের সমারোহ, বয়ে যাওয়া নদীর কলতান, পাখির কলকাকলী পাহাড়-পর্বত সব কিছু মিলিয়ে প্রকৃতি অপার এক মহিমা বিরাজ করছে আামাদের এইভূ-খন্ডে পরিচিতির দিক থেকে সুন্দরবনের পরেই লাউয়াছড়ার বনের অবস্থান আয়তনে ছোট হলেও বন দুর্লভ উদ্ভিদ এবং প্রানীর এক জীবন্ত সংগ্রহশালা বনে প্রবেশের সাথে সাথেই নানা ধরনের বন্যপ্রাণী, পাখি এবং কীটপতঙ্গের শব্দ শোনা যায় 
প্রথমত, ইংরেজ ঔপনিবেশ আমলে ফরেষ্টকে ম্যানগ্রোভের ডাইভার্ট সিটি বা ইংরেজিতে ঝটঘউঅজও বহুবিধ হওয়ায় সুন্দরবন নামে অভিহিত করে দ্বিতীয়ত, সমূদ্রের উপকুলে বন ভুমির অবস্থান হওয়ায় হিন্দিতে বলা হত- “সামান্ডারবন বা সুন্দরবন তৃতীয়ত, বনভুমির মোট ৭৩ ভাগ সুন্দরী গাছের আধিক্য থাকায় নাম হয়েছে সুন্দরবন চতুর্থত, প্রতিদিন- প্রতি ঘন্টায় বিশ্বের সর্ববৃহত ম্যানগ্রোভ বনভুমি তার সৌন্দর্যের রুপ পাল্টায় বলে এর নাম হয়েছে সুন্দরবন আব্দুর রব আরও জানান, বাংলাদেশ থেকে তিনিসহ মাত্র দুজন ব্যক্তি অষ্ট্রেলিয়ায় অহরসধষ ঝড়পরড়ষড়মু উপর পড়া লেখা করেন বর্তমানে তিনিই একমাত্র বাংলাদেশে কর্মরত রয়েছেন তিনি ১৯৯৪ সালে সুন্দরবনে কাজে যোগদান করেন ২০০২ সালে কুমির প্রজনন কেন্দ্রের অবকাঠামো তৈরীর পর সরকারের বন বিভাগের উদ্যোগে ব্যক্তিগতভাবে তিনি ২০০৪ সাল থেকে করমজল ষ্টেশনে দেশের একমাত্র কুমির প্রজনন কেন্দ্রের দ্বায়িত্ব পালন করে আসছেন তবে তিনি গবেষনা করে যাচ্ছেন বিশ্বের ২৬ প্রজাতির কুমির নিয়ে দেশের কুমির সম্পর্কে তিনি জানান, এক সময় আমাদের দেশে প্রজাতির কুমির ছিল যার মধ্যে মার্ক ক্রোকেডাইল বা ইন্ডিয়ান মাদার, ঘড়িয়াল কুমির যা পদ্মা নদীতে দেখা যেত আরেক শ্রেনীর কুমির রয়েছে যা লবন পানির কুমির নামে পরিচিত উপরোক্ত দুটি প্রজাতির কুমির ইতোমধ্যেই বিলুপ্ত হয়েছে লবন পানির কুমিরও প্রায় বিলুপ্তির পথে বিশ্ব ঐতিহ্যের সুন্দরবন স্বমহিমায় গর্বিত বিশ্বের সর্ববৃহত ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চাল হিসেবে পরিচিত নামের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে যার সার্থকতা বিশ্ব ঐতিহ্যের ম্যানগ্রোভ জীব বৈচিত্রে ভরপুর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরুপ লীলাভূমি সুন্দরবন বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিন-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেষে পশুর নদীর একাংশের তীরে সুন্দরবনের অবস্থান বনের আয়তন হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার ম্যানগ্রোভ জাতীয় উদ্ভিদে ভরপুর বিশ্বের সবচেয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সুন্দরবনের পূর্ব পশ্চিমে ২টি ডিভিশনের আওতায় ৪টি রেঞ্জে ভাগ করা হয়েছে বনভূমি দেশের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ৫১ ভাগ সুন্দরবনের রেঞ্জগুলো হল- চাঁদপাই, শরনখোলা, নলিয়ান-খুলনা সাতক্ষিরা রেঞ্জ সাতক্ষিরা রেঞ্জের সাথে রয়েছে ভারতের সুন্দরবন রেঞ্জের সীমানা বিশাল সুন্দরবন রেঞ্জে কর্মরত রয়েছেন প্রায় ১১শ জন স্টাফ যা বনাঞ্চল রক্ষা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য প্রকৃতির অপরুপ শোভা নির্ভর এই সুন্দরবনে রয়েছে ৩শ ৩৪টি উদ্ভিদ প্রজাতি, ১শ ৬৫ প্রজাতির আলগি, ১৩ প্রজাতির অর্কিড, ৩শ ১৫ প্রজাতির পাখি, ২শ ১০ প্রজাতির মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ৪২ প্রজাতির মোলাসকাস বা ঝিনুক, ১৩ প্রজাতির কাকড়া, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ি প্রাণি, ৩৫ টি রেপটাইল প্রজাতি, ৩৬ প্রজাতির গাছ ৩শ ৭৫ প্রজাতির বন্য প্রাণী বন্য প্রাণির মধ্যে পৃথিবীর একমাত্র রয়েল বেঙ্গল টাইগারের প্রাকৃতিক আবাসস্থল এবং সবচেয়ে ঘন বসতি পূর্ণ স্থান সুন্দরবন ২০০৪ সালের ভারত-বাংলাদেশের যৌথ গননানুযায়ি ৪শ ৪০ টি রয়েল বেঙ্গল টাইগারের অস্তিত্ব দেখা মেলে সুন্দরবনে এবনে রয়েছে লাখের বেশী বিলুপ্ত প্রায় চিত্রা হরিণের বসবাস যা রয়েল বেঙ্গল টাইগারের অন্যতম খাবার ছোট বড় ৩০ প্রজাতির সাপ রয়েছে সুন্দরবনে এখানে নানাজাতের মাছের সাথে রয়েছে সাপ-ব্যাঙ আর জলজ উদ্ভিদের নিত্য বসবাস পানিপূর্ণ বাইক্কা বিলের চারিদিকে শুধুই পানি আর পানি পানির ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ আর হিজল-করচের ডুবে যাওয়া বনটি যেন নতুন প্রাণ জেগে উঠে বিস্তীর্ণ প্রান্তরজুড়েএমন সৌন্দর্যের এক অপরুপ লীলাভূমি পৃথিবীর কোথাও নেই।ইউরোপিয় ইউনিয়ন থেকে বরাদ্দকৃত অর্থের কিছু কাজ হয়েছে যা আজ জনগনের চোখে দেখার মত অবস্থায় রয়েছে তিনি অভিযোগ করে বলেন, সরকার সেনা বাহিনী পুলিশকে ঝুঁকি ভাতা দেয় অথচ তারা কোন ঝুঁকি ভাতা পান না তিনি আপসোস করে বলেন, সম্প্রতি তাদের এক সহকর্মি বন দস্যুদের আক্রমনে নিহত হয়েছেন সরকারের পক্ষ থেকে তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ বাবদ মাত্র হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে ওই নিহত ব্যক্তির এক ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছে তারা অবসরে গেলেও পেনশন এর টাকা পেতে তাদের বাকি জীবনের আয়ু অর্ধেকটাই কমে যায় এনিয়ে বহুবার সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও কোন কাজ হয়নি অথচ প্রতিদিন দ্বায়িত্ব পালনের সময় হিংস্র বন্য প্রাণি, জল দস্যু চোরা কারবারিদের হাতে জীবন নাশের সংশয় থাকে প্রতি মূহুর্তে তবে সুন্দর বনের ভরপুর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে দর্শনার্থীদের অনেকটাই বেগ পেতে হয় পর্যটকদের সুরক্ষার জন্য নেই পর্যাপ্ত ব্যবস্থা সরকারী বা বে-সরকারীভাবে গড়ে তোলা হয়নি কুমির প্রজনন কেন্দ্রের আশ পাশে কোন আবাসিক ব্যবস্থা মংলা বন্দরের ঘাট থেকে সাম্পান নৌকা বা জারি বোটে করে পশুর নদীর বিপদ সংকুল পথ পারি দিয়ে করমজল ষ্টেশন যন্ত্র চালিত জারি বোটের ৪০ মিনিটের পথের ভাড়া লাগবে অন্তত হাজার টাকা জারি বোটে করমজল যাওয়ার পথে পশুর নদীর পশ্চিম তীর ঘেষে গোল পাতার ঘুপরি ঘরের ঘিঞ্জি পরিবেশে কোন রকম দাড়িয়ে রয়েছে বাংলাদেশের প্রাচীন পতিতা পল্লী বানীশান্তা পতিতা পল্লির দক্ষিণ প্রান্ত থেকেই সুন্দর বনের শুরুমজার ব্যাপার মেশিনে নিজেদের ইচ্ছে অনুযায়ি ছেলে বা মেয়ে কুমিরের বাচ্চা ফুটানো যায় তবে প্রাকৃতিক কারণে ৪০-৫০টি ডিম নষ্ট হয়ে যায় ডিম থেকে ফোটা ওই বাচ্চাগুলোকে প্রজনন কেন্দ্রের তৈরি করা খাঁচায় নির্দিষ্ট একটা সময় রেখে বড় করার জন্য লালন পালন করা হয় খাবার হিসেবে দেয়া হয় মাছ মাংস বাচ্চাগুলো মিটার বা সাড়ে ফুট দৈর্ঘের হলে এবং সাথে সাথে শারিরিক কাঠামো প্রকৃতির সাথে মিলে নিজেরা টিকতে পারবে এমন অবস্থার পর তাদের অবমুক্ত করা হয় সুন্দরবনের খালে সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য পর্যন্ত ৭০ টি কুমির অবমুক্ত করা হয়েছে বলে রব জানান বন্য কুমিররের প্রধান খাবার হচ্ছে মাছ কার্কাস বা মৃত দেহ করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রে সব সময় কুমিরছানার দেখা মেলে বর্তমানে শতাধিক কুমিরছানা রয়েছে প্রজনন কেন্দ্রে আব্দুর রব মিয়া আশার বানি শুনিয়ে বলেন, সরকার চাইলে এক সময় বাংলাদেশ থেকে লাভ জনক কুমির পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করতে পারবে তিনি আরও বলেন, প্রতি বছর পর পর বন্য প্রাণি গননা করা উচিতকরমজল ষ্টেশনে দেখা মেলবে শিকারিদের আঘাতে আহত হরিণেরপাল বাদরের সাথে ইচ্ছে করলেই বাদরামিও করতে পারেবেন অনায়াসে তবে সব সময় সাবধান থাকবে সু-দৃশ্য হিংস্র রয়েল বেঙ্গল টাইগার বিষধর সাপ থেকে

No comments:

Post a Comment