Pages

Sunday, January 3, 2016

কবি মুকুন্দ দাসের কালী বাড়ী

ভয় কি মরনে /রাখিতে সন্তানে / মাতুঙ্গি মেতেছে আজ / সমরো রঙ্গে’- ব্রিটিশবিরোধী জাগানিয়া এমন সব গনসংগীত আজও প্রান ছুঁয়ে যায় মুক্তচিন্তার মানুষের আজও প্রান জাগায় সমাজবদলের কিংবা সত্য- ন্যায়ের পথে দেশগড়ায় ব্রত মানুষের চারনকবি মুকুন্দ দাস এমন অনেক গান বানিয়ে , গান শুনিয়ে যেমন আন্দোলিত করেছিলেন স্বদেশিদের ,বিল্ববের ঝান্ডায় রসদ জুগিয়েছিলেন , কবিতা , নাটক , যাএাপালায় , বিট্টিশবিরোধী বিপ¬বীদের রাজনৈতিক মঞ্চে সমানে অংশ নিয়েছিলেন , তেমনি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি বিখ্যাত হয়ে ওঠেন  

 উপমহাদেশজুড়ে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে গত শতাব্দীর প্রথমভাগ থেকেই আজ চরনকবি মুকুন্দ দাসের ৭৮তম মৃত্যুবার্ষিকী ১৯৩৪ সালের ১৮ মে গভির রাতে ঘুমের মধ্যে মারা যান তিনি তাঁর পূর্বপুরুষেরা ঢাকার বিক্রমপুরের মানুষ হলেও তিনি শৈশব থেকেই বেড়ে ওঠেন বরিশালে তিনিও জীবদ্দশায় বরিশালের মানুষ হিসেব্ইে নিজেকে পরিচিত করেছেন স্বাচ্ছন্দে স্কুলের পড়াশোনা তেমন হয়নি মুকুন্দ দাসের কিছুদিন কেটেছে পাঠশালায় , তারপর বরিশালের জিলা স্কুল এবং সবশেষে বরিশাল ব্রজমোহন বিদ্যালয়ে পড়াশোনা তবে প্রায় কুড়ি বছর বয়সে কোনোরকম সার্টিফিকেট ছাড়াই পড়ালেখার ইতি টানেন তিনি মুকুন্দ দাসের পারিবারিক নাম ছিলযজ্ঞেশর দে বাবা গুরুদয়াল দে সরকারি অফিসের নিম্মশ্রেনীর কর্মচারীর কাজ করার পাশাপাশি  একটি মুদিদোকান চালিয়ে সংসার টেনে কিতেন কোনোভাবে পড়ালেখায় মন ছিল না যজ্ঞেশর ওরফে মুকুন্দ দাসের বাবা তাকে বলে  কয়ে বেঁধে দোকানদারিতে বসিয়ে দিয়েছেন তখনআ তার সঙ্গে পরিচয় হয়  বীরেশ্বর গুপ্তের গানের দলের সঙ্গে যুক্ত হন ওই দলের প্রধান সহায়ক হিসেবে শুরুতে কেবল কীর্তনে বেশি ঝোঁক থাকায় সেটা চর্চায় বেশি মনোযোগী ছিলেন কীর্তনিয়া হিসাবে নামডাক ছঢ়িয়ে যায় দ্রুত কীর্তন গানের পাশাপাশি নিজে গান লিখে গাইতে শুরু করেছিলেন  এভাবেই বেড়ে ওঠা মুকুন্দ দাসের তখনোমুকুন্দনাম প্রচারিত হয়নি সবাই ডাকেযজ্ঞা কীর্তনের আসরে ডাক পড়ে গানের আসওে ডাক পড়ে এর মধ্যেই ১৯০০সালে ২২ বছর বয়সে বিয়ে করেন এর পরপরই রামানন্দ ঠাকুরের কাছে দীক্ষা গ্রহন তিনিই তার নাম রাখেন মুকুন্দ দাস সেই সঙ্গ নিজে ঢংয়ে গানকবিতা - যাএাপালার ভেতরে ঢুকে যান আরও ১৯০৩ সালে বরিশাল আদর্শ প্রেস থেকে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম বই নাম,‘সাধনসঙ্গীত সেটি উৎর্সগ করেন গুরু রামানন্দকে যোগাযোগ হয় নামীদামি স্বদেশি চেতনার সাহিত্য -সংগীত আসরে সময় থেকে মহাত্মা অশ্বিনীকুমারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক গুরু- শিষ্য পর্যায়ে উন্নীত হয়ে থাকে স্বাদেশিকতার চর্চাও এখান থেকে শুর হয় এবং মুকুন্দ দাস ক্রমেই বৈষ্ণব ধারনা থেকে সরে আসতে থাকেন ১৯০৪সালের দিকে কালিসাধক সোনাঠাকুর দ্বারা প্রভাবিত হন মুকুন্দ দাস ১৯০৫ সালে রচনা করেন প্রথম পালাযাত্রা

মাতৃপুজা যাএার মধ্য দিয়ে স্বদেশি আন্দোলনের ধারাকে আরও জাগরিত করেন ওই যাএাপালার পান্ডুলিপি বাজেয়াপ্ত করে তৎকালীন পুলিশ যাএাদল গড়ে সারা দেশ ঘুরে বেড়াতে থাকেন তিনি যাএা থামিয়ে মাঝেমধ্যেই বক্তাতার ঢঙ্গে সমকালকে তুলে ধরেন মুকুন্দ দাসের যাত্রাপালা গান বিট্টিশ শাসকের ভীতির কারন হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বিট্টিশ সরকারের রোষানলে পড়ে ১৯০৮ সালে তিনি গ্রেপ্তার হন জেল খেটে ১৯১১ সালের প্রথমভাগে দিলি¬ কারাগার থেকে ছাড়া পান এর মাঝেই স্ত্রীর মৃত্যু ঘটে জেলফেরত মুকুন্দ আবার পৈতৃক মুদিদোকানের হাল ধরেন কিন্তু অল্প ব্যবধানে আবার তিনি বেড়িয়ে পড়েন গান , যাএাপালা নিয়ে মুক্তিকামী মানুষের সঙ্গে বিপ¬বীর বেশে ভারতবর্ষের আনাচকানাচে ছড়িয়ে পড়ে তার নাম দেশবন্দু চিওরঞ্জন দাস , প্রিয়ম্বদা দাস , স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় , আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু তাঁর গানে মুগ্ধ নজরুল এসে দেখা করেন তাঁর সঙ্গে এসবের মধ্য দিয়ে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে তিনি বরিশালের কাশীপুর কালীমন্দিরের জায়গা কেনেন , যা এখন বরিশাল নগরীতে ঢোকার মুখে নথুল¬াবাদ বাস টার্মিনাল -সংলগ্ন চারনকবি মুকুন্দ দাসের কালীবাড়ি জায়গা ছিল ৮৭ শতাংশ , এখন আছে মাএ ১৯ শতাংশ বাকিটা বেহাত হয়ে গেছে বর্তমান স্থানটুকু ঘিরে আছে ছাএাবাস , লাইব্রেরি, দাতব্য চিকিৎসালয় এবং পুজামন্দির সামনের কিছু অংশে আছে একসারি স্টল একটি কমিটির মাধ্যমে চলছে এর সার্বিব ব্যব¯থাপনা মুকুন্দ দাসের স্মৃতিরক্ষায় এখন বরিশালে সবেধন নীলমনি হয়ে আছে ওইটুকুই ছাড়া তাঁর গান এবং সৃষ্টিকর্ম নিয়ে বিছিন্ন ভাবে কিছু কাজ হচ্ছে বরিশাল ঢাকায় কেউ কেউ তাকে নিয়ে গবেষনার কাজে ওহাত দিয়েছেন কয়েক বছর মুকুন্দ মেলা হলেও এখন পুরোপুরি বন্ধ উদীচী-বরিশাল থিয়েটারের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় ১৯৮৬সালে প্রকাশ করেছিল মুকুন্দ দাসের গানের একটি ক্যাসেট মুকুন্দ দাস বিষয়ে বইও দুষ্প্রাপ্য যা পাওয়া যায় , সেগুলো গতানুগতিক ছাড়া গত বছর থেকে দেশের অন্যতম খ্যাতিমান নাট্যসংগঠনপ্রাঙ্গনে মোরমুকুন্দ দাসকে নিয়ে বেশ সমৃদ্ধ একটি নাটক তৈরি করেছে , যা এখন বিভিন্ন স্থানে প্রদর্শনীর সময় বেশ প্রশংসিত হচ্ছে ছাড়া অনেক দিন আগে বরিশাল নাটক মুকুন্দ দাসের যাত্রাপালাসমাজনিয়ে কাজ করেও বেশ সাফল্য পায় বরিশালের অন্যতম নাটকের দল খেয়ালি গ্রুপ থিয়েটার প্রতি বছরই মুকুন্দ দাসের স্মরনসভা করে থাকে পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে বরিশালের বেশ কয়েকজন লোক,সংঙ্গীতশিল্পী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব যাঁর যাঁর অবস্থানমতো কেউ মুকুন্দ দাসকে নিয়ে লেখালেখি করেন , কেউ কেউ গান করেন , কেউ তাঁর সৃষ্টিকর্ম নিয়ে আলোচনা-পর্যলোচনা করে নতুন প্রজম্মের মাঝে মুকুন্দ দাসকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন আজ মুকুন্দ দাসের মৃত্যুদিবসে আসুন কেবল মুকুন্দ দাসের বরিশালেই নয়, সারা দেশের মানুষ , সারা বিশ্বের বাঙালি এক হয়ে, এক সুরে, বহুকন্ঠেন চারনকবি মুকুন্দ দাসের ভাষায় বলে উঠি -‘আয়রে বাঙালি/আয় সেজে আয়/ আয় লেখে যাই/ দেশের কাজে। 
See more at: http://www.touristguide24.com/details.php?id=2358#sthash.LYZ0FTGO.dpuf

No comments:

Post a Comment