ভারতের
কাটাতারে বেষ্টিত পাহাড়ি
গ্রাম
সোমনাথপাড়া। এ গ্রামে
প্রায়
অর্ধশত
টিলা
ভূমি
। সেখানে গ্রামবাসীদের বসতি। এ
গ্রাম
বন
বৃক্ষের সবুজে
ঘেরা। টিলার
নিচে
রয়েছে
ঝরনা। পাহাড়
যে
কাঁদে
এ
যেন
তারই
বাস্তবতা। ছায়া সুনীবিড় এ
গ্রামটির বাড়িগুলো দেখে
মনে
হয়
যেন
নীল
আকাশের
নীচে। এ
গ্রামের মেয়ে ললিতা
সাংমা
(১৬)
জানায়,
তারা
তিন
বোন
দুই
ভাই। সে
তার
বড়
বোন
বিণীতা
সাংমার
সাথে
ঢাকায়
বিউটি
পার্লারে কাজ
করে। নিজেদের সংসারের সচ্ছলতা আনতে
তারা
এ
কাজ
বেছে
নিয়েছে। তবে
তিন
চার
মাস
পর
পর
তারা
বাড়িতে
আসে। তার
ছোট
ভাই
বিটানল
মারাক
ও
রাহুল
মারাকের পড়াশোনার খোজঁ
নেয়। বিটারনল এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষে
ও
রাহুল
ষষ্ঠ
শ্রেণীতে ।
আগে
তার
মা
পাহাড়ে
লাকড়ি
কুড়াতো। তার
বাবা
গেজন
সাংমা
ছিল
অসুস্থ্য। তার মায়ের আয়ে
দিনে
একবার
চূলায়
আগুন
জ্বলত। কতরাত
যে
না
খেয়ে
ঘুমিয়েছে তার
হিসেব
নেই
ললিতার
কাছে। এখন
তাদের
দু’বোনের আয়ে সংসারে
সচ্ছলতা এসছে। তারা
স্বপ্নে দেখছে
বিটারনল ও
বাহুল
পড়া
লেখা
করে
আরো
ভাল
চাকরি
করবে।
রমলা মারাক বলেন, পাহাড়, বন আর ভূমি আমাগোর জীবন। এখানে শাকসবজি, ধান আর ফল মূলের চাষ হয়। এসব কিনতে হয়না। তিনি আরো বলেন, তিন চার মাস পর পর তার ছেলে মেয়েরা বাড়িতে আসে। তবে এ গ্রামের রাস্তা কাচাঁ। যদি পাকা হতো তাহলে আসা যাওয়ার ভোগান্তি থেকে রেহাই পেত তারা। এ রাস্তায় রিক্সা, ভ্যান কিছুই চলে না। তার প্রতিবেশি গৃহবধূ পালিনা সাংমা বলেন, এ গ্রামটির সৌন্দর্য্য অন্য ১০টি গ্রামের চেয়ে আলাদা। এক সময় আমাদের কষ্টের সীমা ছিলনা। এখন দিন দিন যেন অভাবের তাড়না কমে আসছে।
শ্রীবরদীর পার্শ্ববর্তী উপজেলা জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী সোমনাথপাড়া গ্রামে শুধুমাত্র ক্ষুদ্র নৃ তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী লোক জনের বসবাস। তারা সবাই গারো সম্প্রদায়ের। গ্রামবাসীদের মতে, তারা আজোও মৌলিক চাহিদা বঞ্চিত হচ্ছে। নেই কোনো স্বাস্থ্য সেবা, যোগাযোগ ব্যবস্থাও নাজুক, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নেই, কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। তবুও তারা নতুন স্বপ্ন দেখে। স্থানীয় সচেতন মানুষের মতে, সুযোগ সুবিধা ব্যবস্থা করা হলে, অধিকার নিশ্চিত করা হলে, ন্যায় বিচার ব্যবস্থ্যা করা হলে ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হলে এ সোমনাথপাড়া গ্রামটি আরো উজ্জল হবে।
সোমনাথপাড়া ২৫টি পরিবার রয়েছে। এ গ্রামের উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিম সীমান্ত জুড়ে ভারতের কাটা তারের বেড়া। দক্ষিণ ও পূর্ব দিকে ঘোড়াগ্রী, দক্ষিনে বালুঝুরি ও দক্ষিণ পশ্চিম কোনে সাতানিপাড়া গ্রাম। তবে পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোও প্রায় দুই কিলোমিটার করে দূরে। পাহাড়ি ঝোঁপ জঙ্গলে বেষ্টিত এ গ্রামে প্রায় দেড়শ ভোটার রয়েছে। সব পরিবারে দু’এক জন করে চাকরিজীবি বা কর্মজীবি রয়েছে। তারা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে কাজ করেন। তারা ধর্মীয় উৎসবসহ বছরের বিভিন্ন সময়ে বাড়িতে আসে। যারা গ্রামে থাকে তারা কৃষির সাথে জড়িত। মাত্র এক বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ গ্রামে দু’টি গীর্জা। একটি মিশনারী বিদ্যালয়। এখানে ৩২ জন শিশু পড়াশোনা করে। তাদের বেশির ভাগ পরিবার ঝরনার পানি পান করে। স্যানিটেশন ব্যবস্থাও নিজেরাই করেছে। গ্রামবাসীরা ধর্মীয় উৎসবের পাশাপাশি তাদের কৃষ্টি, কালচার, ও সংস্কৃতি চর্চা করেন। বিনোদনের মাধ্যম টেলিভিশন। পরিত্যক্ত পাহাড়ি টিলাতে শিশুরা খেলাধূলা করে। হাডুডু, গোলাপছুট, কানামাছি, বৌছি, দাঁড়বাধাঁ ও ফুটবলসহ নানা ধরনের খেলাধূলা করে শিশুরা। গোলাকৃতির এ গ্রামের মাঝ দিয়ে একটি দু’ পায়ে মেঠো পথ।
উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েল ফেয়ার এশোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ও ওই গ্রামেরই বাসিন্দা হোসিও ম্রং বলেন, কিভাবে এ গ্রামের নাম করণ করা হয়েছে তার সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে লোক মুখে প্রচলিত সোমনাথ নামে এক ধর্ম যাজক প্রথম এ গ্রামে এসে বসতি করেন। তার মৃত্যুর পর থেকে গ্রামটির নাম হয় সোমনাথপাড়া। প্রকৃতিকভাবে ছোট বড় টিলা ভূমি রয়েছে ২০/২৫টি। এসব টিলার ওপরে ঘর বাড়ি। গ্রামবাসীদের মধ্যে অনেকের অভিযোগ, দিনে জোঁক আর রাতে বন্য হাতির উপদ্রবের শিকার তারা। অপরদিকে বিএসএফ আর বিজিবি সদস্যদের হুমকি ধামকিতেও তারা অজানা এক আতংকে দিন কাটান। সোমনাথপাড়ায় ধর্মীয় উৎসবগুলোর মধ্যে বড় দিন ও ওযানগালা অনুষ্ঠিত হয় আনন্দ ঘন পরিবেশে। গারোদের প্রাচীন এ উৎসব প্রতি বছরই পালিত হয়। এ উৎসবকে ঘিরে যেন গ্রামের বনাঞ্চলেও নেমে আসে আনন্দের বন্যা । শিশু কিশোর নারী পুরুষ সবাই মিশি শালজং দেবতাকে পূজা অর্চনা করেন। এ উৎসবে গারো মেয়েরা কৃঞ্চতা মাগে প্রাচীন সাজে শস্য বুনন, পরিচর্যা, উত্তোলন, প্রকিয়াজাত ও খাওয়ার পদ্ধতি সংস্কৃতির মাধ্যমে তুলে ধরেন। মান্দি সংস্কৃতির গ্রীকা, গৌরিরূপ. দুখুসুপ, কবিতা, কৌতুক, গল্প ও নাচ গানে মেতে উঠে তারা। এ উৎসব দেখতে সব ধর্মের লোকেরই ঢল নামে সোমনাথপাড়ায়। দেশের যে কোন স্থান থেকে বাসে বা যে কোন যান বাহনে আসতে পারেন শেরপুর জেলা শহর হয়ে যাওয়া যায় সোনাথপাড়ায়। সেখান থেকে সড়ক পথে ২০ কিলোমিটার দূরে শ্রীবরদী। এখান থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে লাউচাপড়া পিকনিক সেন্টার হয়ে যেতে হবে বালুঝুরি বাজার। সেখান থেকে আরো প্রায় ৩ কিলোমিটার পাহাড়ি পথ পার হলেই সোমনাথপাড়া গ্রাম।
See more at:
http://www.touristguide24.com/details.php?id=2310#sthash.LwDEjakZ.dpuf
No comments:
Post a Comment