Pages

Monday, January 4, 2016

মুক্তাগাছার রাজবাড়ী


পেছনে আছে রাজ কোষাগার, টিন ও কাঠের সুরম্য দ্বিতল রাজপ্রাসাদ। রাজবাড়ীর সম্মুখভাগের বিশাল লোহার ফটক পেরোতেই সুউচ্চ করিডর। এর একপাশে ছিল রাজ দরবার ও দ্বিতল কাচারিঘর। আরেক পাশে লাইব্রেরি।

অযত্ন আর অবহেলা সত্ত্বেও কালের সাক্ষী হিসেবে কোনোমতে টিকে ছিল মুক্তাগাছার রাজবাড়ী। জরাজীর্ণ এ অবস্থা থেকে এ রাজবাড়ীটিকে আসল চেহারায় ফিরিয়ে আনতে শুরু হয়েছে পূর্ণোদ্যমে সংস্কার কাজ।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের অধীনে বছর খানেক যাবৎ সাজানো-গোছানো হচ্ছে পর্যটক তীর্থ এ রাজবাড়ী। এ সংস্কার কাজ শেষ হলে পুরনো আদলে আগের চেহারায় ফিরবে মণ্ডার উপজেলা হিসেবে পরিচিত এ রাজবাড়ীর জমিদারি জমানার স্মৃতি।
Rajbari5ময়মনসিংহ জেলা সদর থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরবর্তী উপজেলার নাম মুক্তাগাছা। এ মুক্তাগাছায় ছিলেন ষোল হিস্যার জমিদার। ১৬ জন জমিদার মুক্তাগাছা অঞ্চল শাসন করতেন। মহারাজ সূর্যকান্ত আচার্য্য চৌধুরী ছিলেন এর মধ্যে অন্যতম। তারই দত্তক পুত্র মহারাজ শশীকান্ত আচার্য্য চৌধুরী। মুক্তাগাছার দর্শনীয় স্থানগুলোর এ রাজবাড়ীটি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।
প্রায় ১০০ একর জমির ওপর রাজ পরিবারের ৩টি বাড়ির অবস্থান। এক নম্বর বাড়িটি ছিল মহারাজ সূর্যকান্তের। সম্মুখভাগের একতলা ভবনটি বেশ উঁচু ও উপরিভাগে নানা কারুকার্যখচিত রয়েছে। লোহার পাত ও কাঠের পাটাতনের ওপর এর ছাদ নির্মিত। এর চারপাশে ব্যবহৃত লোহার পাতেও রয়েছে নানা নকশাখচিত। এ রাজবাড়ীর ঠিক মাঝখানে রয়েছে শ্বেতপাথরের স্বয়ংক্রিয় ঘূর্ণায়মান রঙ্গমঞ্চ, পাশেই নান্দনিক কারুকার্যখচিত রাজ রাজেশ্বরী মন্দির।
করিডোরের দুই পাশে ছিল হাতির ৬টি মাথার ওপর শিকার করা বাঘের নমুনা। রাজবাড়ী লাগোয়া বিশাল পুকুর। মন্দির ও যুগল মন্দিরসহ সুন্দর স্থাপত্যশৈলীর এ বাড়িটি ঘুরে দেখলে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকতে হয়। জানা গেছে, সম্প্রতি প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে মুক্তাগাছার ঐতিহ্য এ রাজবাড়ীটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
এ রাজবাড়ীর মূল ভবনের মেরামত ও সংস্কার কাজের অংশ হিসেবে লাগানো হয়েছে রং। বাদ বাকি কাজও চলছে জোরেশোরে। মুক্তাগাছা রাজবাড়ীর রঙ্গমঞ্চের পাশেই রাজেশ্বরী মন্দির। দরজায় জোড়া সিংহ ও জোড়া ময়ূরসহ সিমেন্টের ওপর নানা কারুকার্য খচিত রয়েছে। এর সম্মুখভাগের সংস্কার কাজও শুরু হয়েছে। দামি টাইলসে সাজানো হচ্ছে মেঝে। রং ও কারুকার্যের সমন্বয়ে অতীতের আসল চেহারা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।
জানা গেছে, মুক্তাগাছার এ রাজবাড়ীটি দেখভাল করতে রয়েছে চারজন কর্মচারী। নান্দনিক স্থাপনাশৈলীর অনন্য নিদর্শন এ ঐতিহাসিক বাড়িটির ধ্বংসের প্রান্তসীমা থেকে রক্ষা করতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর চালিয়ে যাচ্ছে তাদের কর্মযজ্ঞ। ইতিমধ্যেই কোটি টাকার সংস্কার কাজ সমাপ্ত করা হয়েছে।
দ্বিতীয় ধাপের কাজও চলছে পুরোদমে। জমিদারদের জমিদারি বিলীন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের বহু বিষয়সম্পত্তি ও কারুকার্যের বাসভবন, মন্দির, নাটমহল, সান বাঁধানো ঘাটসহ মূল্যবান স্থাপনাগুলো হয়ে পড়ে জীর্ণ মলিন। ক্ষয়ে ক্ষয়ে হয়েছে কঙ্কাল। ভবনের ইট, সুরকি, আস্তর ধসে পড়েছে। দেয়াল ছাড়াই শুধু খুঁটির ওপর দাঁড়িয়ে জানান দিচ্ছে তাদের অতীত অস্তিত্বের।
কারুকার্য খচিত অট্টালিকাগুলোর মূল্যবান কাঠ, লোহা, পাথরসহ বিভিন্ন উপকরণ সুদূর চীন থেকে আনা হয়। আর তা গড়ার কারিগররাও ছিল সে দেশেরই। তাদের ফেলে যাওয়া কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি ভুয়া ও জাল কাগজপত্র প্রস্তুত করে প্রভাবশালীরা দখলে নিয়ে গেছে। তবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে নেওয়া হয়েছে জমিদারবাড়ীসহ রেখে যাওয়া অট্টালিকা, মন্দির ও তৎসংলগ্ন ভূমি।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের উদ্যোগেই পুরাতন আদলের নির্মাণশৈলী ঠিক রেখে সংস্কার করা হচ্ছে এ জমিদারবাড়ীটি। সে ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ কাজ শেষ হলে দেশ-বিদেশের বহু পর্যটক জমিদারবাড়ী দর্শনে এসে বিমোহিত না হয়ে পারবেন না। সঠিক ব্যবস্থাপনা, সংস্কার ও সংরক্ষণ করা হলে মুক্তাগাছা জমিদারবাড়ী হয়ে উঠতে পারে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র । এলাকাবাসীরও দাবি একে পর্যটন জোন হিসেবে ঘোষণা করে সরকারিভাবে উদ্যোগ নেয়া হোক।

No comments:

Post a Comment