Pages

Thursday, January 7, 2016

লালবাগের কেল্লার আসবাবপত্র

লালবাগ কেল্লা পুরাতন ঢাকার লালবাগে অবস্থিত। লালবাগ কেল্লা, মোঘল আমলের বাংলাদেশের একমাত্র ঐতিহাসিক নিদর্শন যাতে একই সাথে ব্যবহার করা হয়েছে কষ্টি পাথর, মার্বেল পাথর আর নানান রঙবেরঙের টালি। লালবাগ কেল্লা ছাড়া আর বাংলাদেশের আর কোন ঐতিহাসিক নিদর্শনে এমন কিছুর সংমিশ্রণ পাওয়া যায় নি আজ পর্যন্ত। প্রায় প্রতিদিন হাজারো দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীর পদচারণয় মুখরিত হয় ঢাকার লালবাগ এলাকার এই দুর্গটি। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার ঘুরে এসেছি, প্রথমবার যখন যাই তখন শুধু ঘুরেই এসেছি, এর বাইরে কিছু জানার চেষ্টা করি নি। পরে অবশ্য লেখার সুবিধার্থে যাওয়া হয়েছে। তখন চেষ্টা করেছি যতটুকু জানা যায় জেনে নেয়ার যাতে করে এ বিষয়ে মোটামোটি একটা লেখা সাজাতে পারি।

সম্রাট আওরঙ্গজেব তার শাসনামলে লালবাগ কেল্লা নির্মাণের ব্যবস্থা করেন। সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র যুবরাজ শাহজাদা আজম ১৬৭৮ খ্রিষ্টাব্দে এই প্রাসাদ দূর্গের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। তৎকালীন লালবাগ কেল্লার নামকরণ করা হয় আওরঙ্গবাদ কেল্লা বা আওরঙ্গবাদ দূর্গ। পরবর্তীতে সুবাদার শায়েস্তা খাঁনের শাসনামলে ১৬৮৪ খিষ্টাব্দে নির্মাণ কাজ অসমাপ্ত রেখে দূর্গটি পরিত্যাক্ত হয়। সে সময়ে নতুন ভাবে আওরঙ্গবাদ কেল্লা বাদ দিয়ে লালবাগ কেল্লা নামকরণ করা হয়। যা বর্তমানে প্রচলিত।
বর্গাকৃতির সুউচ্চ প্রাচীর ঘেরা লালবাগ কেল্লার প্রথমেই নজরে আসে বিশাল তোরন/ফটক। লালবাগ কেল্লায় মোট তিনটি ফটক আছে যার মধ্যে দুইটি বর্তমানে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ভেতরে প্রবেশ করলেই বাগান ঘেরা পরিবেশ দর্শনার্থীদের মনে আনন্দ দেয়। সোজা একটু ভেতরেই শায়েস্তা খাঁনের প্রিয় কন্যা পরীবিবির সমাধি সৌধ। ১৬৮৭-৮৮ খ্রিষ্টাব্দের কোন এক সময় পরিবিবি মৃত্যুবরণ করেন। তার স্মৃতি ধরে রাখার জন্য শায়েস্তা খাঁন ব্যায়বহুল একটি সমাধি সৌধ তৈরী করেন। এই একটি মাত্র ইমারত মার্বেল পাথর, কষ্টি পাথর ও বিভিন্ন রংয়ের ফুল, পাতা সুশোভিত চাকচিক্যময় টালির সাহায্যে অভ্যন্তরীণ নয়টি কক্ষ অলংকৃত করা হয়েছে। কক্ষগুলির ছাদ করবেল পদ্ধতিতে কষ্টি পাথরের তৈরী। মূল সমাধি সৌধের কেন্দ্রীয় কক্ষের উপরের কৃত্রিম গম্বুজটি তামার পাত দিয়ে আচ্ছাদিত। উল্ল্যেখ্য সমাধিটির সৌধ ২০.২ মিটার বর্গাকৃতির। এছাড়া নাম না জানা আরো দুইটি সমাধি এবং কয়েকটি ফোয়ারা, পাহাড়ি উচু টিলা, সুরঙ্গ পথ এবং কেল্লার দক্ষিণ এবং পশ্চিম দূর্গ প্রাচীরের নির্দিষ্ট দূরত্ব পর পর একটি করে পলকাটা তোপমঞ্চ। কেল্লার একমাত্র পুকুর। চারিদিক ঘাট বাঁধানো সিড়ির মত এবং পুকুরটি বর্গাকৃতির। পেছনে সৈনিকদের ব্যারাক যা বর্তমানে আনসার ক্যাম্প। পাহাড়ি উচু টিলার নিচে যে কক্ষগুলো পরিত্যাক্ত ছিল সেগুলোকে এখন একটি কনফারেন্স রুম বানানো হয়েছে যা কর্তৃপক্ষ ব্যবহার করেন। কয়েকটি সুরঙ্গ পথ দেখা যাবে বাইরে থেকে, এগুলোতে দর্শনার্থীদের প্রবেশ করতে দেয়া হয় না।
লালবাগ কেল্লা মোঘল আমলের বাংলাদেশের একমাত্র ঐতিহাসিক নিদর্শন যাতে একই সাথে ব্যবহার করা হয়েছে কষ্টি পাথর, মার্বেল পাথর আর নানান রঙবেরঙের টালি। লালবাগ কেল্লা ছাড়া আর বাংলাদেশের আর কোন ঐতিহাসিক নিদর্শনে এমন কিছুর সংমিশ্রণ পাওয়া যায়নি আজ পর্যন্ত। প্রথমে এই কেল্লার নাম ছিল কেল্লা আওরঙ্গবাদ। আর এই কেল্লার নকশা করেন শাহ আজম। মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব-এর ৩য় পুত্র আজম শাহ ১৬৭৮ খ্রিস্টাব্দে ঢাকার সুবেদারের বাসস্থান হিসেবে এ দুর্গের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। মাত্র এক বছর পরেই দুর্গের নির্মাণকাজ শেষ হবার আগেই মারাঠা বিদ্রোহ দমনের জন্য সম্রাট আওরঙগজেব তাকে দিল্লি ডেকে পাঠান। এসময় একটি মসজিদ ও দরবার হল নির্মাণের পর দুর্গ নির্মাণের কাজ থেমে যায়।নবাব শায়েস্তা খাঁ ১৬৮০ সালে ঢাকায় এসে পুনরায় দুর্গের নির্মাণকাজ শুরু করেন। তবে শায়েস্তা খানের কন্যা পরী বিবির মৃত্যুর পর এ দুর্গ অপয়া মনে করা হয় এবং শায়েস্তা খান ১৬৮৪ খ্রিস্টাব্দে এর নির্মাণ বন্ধ করে দেন। এই পরী বিবির সাথে শাহজাদা আজম শাহের বিয়ে ঠিক হয়েছিল। পরী বিবিকে দরবার হল এবং মসজিদের ঠিক মাঝখানে সমাহিত করা হয়। শায়েস্তা খাঁ দরবার হলে বসে রাজকাজ পরিচালনা করতেন। ১৬৮৮ সালে শায়েস্তা খাঁ অবসর নিয়ে আগ্রা চলে যাবার সময় দুর্গের মালিকানা উত্তরাধিকারীদের দান করে যান। শায়েস্তা খাঁ ঢাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার পর নানা কারণে লালবাগ দুর্গের গুরুত্ব কমতে থাকে। ১৮৪৪ সালে ঢাকা কমিটি নামে একটি আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠান দুর্গের উন্নয়ন কাজ শুরু করে। এ সময় দুর্গটি লালবাগ দুর্গ নামে পরিচিতি লাভ করে। ১৯১০ সালে লালবাগ দুর্গের প্রাচীর সংরক্ষিত স্থাপত্য হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধীনে আনা হয়। অবশেষে নির্মাণের ৩০০ বছর পর গত শতকের আশির দশকে লালবাগ দুর্গের যথাসম্ভব সংস্কার করে এর আগের রূপ ফিরিয়ে আনা হয় এবং দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এখানকার স্থাপনার অন্তর্গতঃ পরীবিবির সমাধি বেশ উল্লেখযোগ্য। এটি মোগল আমল এর একটি চমৎকার নিদর্শন। প্রশস্ত এলাকা নিযে লালবাগ কেল্লা অবস্থিত। কেল্লার চত্বরে তিনটি স্থাপনা রয়েছে-
  • কেন্দ্রস্থলের দরবার হল ও হাম্মাম খানা
  • পরীবিবির সমাধি
  • উত্তর পশ্চিমাংশের শাহী মসজিদ
এছাড়া দক্ষিণ-পূর্বাংশে সুদৃশ্য ফটক, এবং দক্ষিণ দেয়ালের ছাদের উপরে বাগান রয়েছে। বর্তমানে রবিবার পূর্ণ দিবস ও সোমবার অর্ধদিবস বন্ধ থাকে। সপ্তাহের বাকী ছয়দিন এই কেল্লা দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে।
এছাড়াও দর্শনীয় জিনিসগুলোর মধ্যে লালবাগ কেল্লা মসজিদ, সম্রাট আওরঙ্গজেবের ৩য় পুত্র শাহজাদা আজম বাংলার সুবাদার থাকাকালীন এই মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন ১৬৭৮-৭৯ খ্রিষ্টাব্দে। আয়তাকারে (১৯.১৯ মি: × ৯.৮৪ মি) নির্মিত তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটি এদেশের প্রচলিত মুঘল মসজিদের একটি আদর্শ উদাহরণ। বর্তমানেও মসজিদটি মুসল্লিদের নামাজের জন্য ব্যবহার হয়ে আসছে।
এছাড়া শায়েস্তা খাঁনের বাসভবনের পাশে একটি কামান/তোপ রাখা আছে যা সেই সময়ে বিভিন্ন যুদ্ধে ব্যবহার হত।
এছাড়া লালবাগ কেল্লায় সবচাইতে আকর্ষণীয় এবং দর্শনীয় যে জিনিসটি আছে তা হল সুবেদার শায়েস্তা খাঁনের বাসভবন ও দরবার হল। বর্তমানে যা লালবাগ কেল্লা জাদুঘর হিসেবে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।

No comments:

Post a Comment