Pages

Saturday, January 2, 2016

বাংলাদেশের একটি অপুর্ব স্থান জাফলং

জাফলং, বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার অন্তর্গত, একটি এলাকা। জাফলং, সিলেট শহর থেকে ৬২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে, ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত, এবং এখানে পাহাড় আর নদীর অপূর্ব সম্মিলন বলে এই এলাকা বাংলাদেশের অন্যতম একটি পর্যটনস্থল হিসেবে পরিচিত।বাংলাদেশের সিলেটের সীমান্তবর্তি এলাকায় জাফলং অবস্থিত। এর অপর পাশে ভারতের ডাওকি অঞ্চল। ডাওকি অঞ্চলের পাহাড় থেকে ডাওকি নদী এই জাফলং দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। মূলত পিয়াইন নদীর অববাহিকায় জাফলং অবস্থিত। সিলেট জেলার জাফলং-তামাবিল-লালখান অঞ্চলে রয়েছে পাহাড়ী উত্তলভঙ্গ। এই উত্তলভঙ্গে পাললিক শিলা প্রকটিত হয়ে আছে, তাই ওখানে বেশ কয়েকবার ভূতাত্ত্বিক জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে।

ঐতিহাসিকদের মতে বহু হাজার বছর ধরে জাফলং ছিল খাসিয়া জৈন্তা-রাজার অধীনে থাকা এক নির্জন বনভূমি। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে জমিদারী প্রথার বিলুপ্তির মধ্য দিয়ে খাসিয়া-জৈন্তা রাজ্যের অবসান ঘটলেও বেশ কয়েক বছর জাফলংয়ের বিস্তীর্ণ এলাকা পতিতও পড়েছিল। পরবর্তিতে ব্যবসায়ীরা পাথরের সন্ধানে বিভিন্ন এলাকা থেকে নৌপথে জাফলং আসতে শুরু করেন, আর পাথর ব্যবসার প্রসার ঘটতে থাকলে একসময় গড়ে ওঠে নতুন জনবসতি।
১৯৭১ থ্রিস্টাব্দের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় সিলেটে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প ছিল জাফলংয়ের সীমান্তের ওপারে ভারতের ডাউকিতে। ১৩ জুলাই ইপিআর ও ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদস্যদের একটি সশস্ত্র দল জাফলংয়ে ঢোকে। পিয়াইন নদীর ভাটিতে বাংলাদেশ অংশে রাজাকার আজিরউদ্দিনের বাড়িতে ছিল একদল পাকিস্তানি সেনা। উভয় পক্ষের মধ্যে দুই দফা যুদ্ধ শেষে পাকিস্তানী বাহিনীর ৫ সেনা নিহত হলে পাকিস্তানিরা পলিয়ে যায়। একই সময় দুজন মুক্তিযোদ্ধাও আহত হন। এছাড়া জাফলংয়ের পাশে সারি নদীতেও বড় আকারের যুদ্ধ হয়। আর এভাবেই শত্রুমুক্ত হয়ে স্বাধীনতা পায় জাফলং। আর আজ জাফলং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থানের রূপ পরিগ্রহ করেছে। তামাবিল স্থল বন্দরের শুল্ক অফিসের পাশেই রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের গন কবর।জাফলং-এর বাংলাদেশ সীমান্তে দাঁড়ালে ভারত সীমান্ত-অভ্যন্তরে থাকা উঁচু উঁচু পাহাড়শ্রেণী দেখা যায়। এসব পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝরণা পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। এছাড়া ভারতের ডাউকি বন্দরের ঝুলন্ত সেতুও আকর্ষণ করে অনেককে। এছাড়া সর্পিলাকারে বয়ে চলা ডাওকি নদীও টানে পর্যটকদের। মৌসুমী বায়ুপ্রবাহের ফলে ভারত সীমান্তে প্রবল বৃষ্টিপাত হওয়ায় নদীর স্রোত বেড়ে গলে নদী ফিরে পায় তার প্রাণ, আর হয়ে ওঠে আরো মনোরম। ডাওকি নদীর পানির স্বচ্ছতাও জাফলং-এর অন্যতম আকর্ষণ। পহেলা বৈশাখে বাংলা নববর্ষকে ঘিরে জাফলং-এ আয়োজন করা হয় বৈশাখী মেলা। এই মেলাকে ঘিরে উৎসবে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো এলাকা। বর্ষাকাল আর শীতকালে জাফলং-এর আলাদা আলাদা সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। বর্ষাকালে বৃষ্টিস্নাত গাছগাছালি আর খরস্রোতা নদী হয় দেখার মতো। তাছাড়া পাহাড়ের মাথায় মেঘের দৃশ্যও যথেষ্ট মনোরম।এদিকে বিশ্বের অন্যতম জলার বন রাতারগুল সোয়াম ফরেষ্ট দেখতে পর্যটকদের ব্যাপক সমাগম ঘটে এবং সেখানে প্রতিদিন দেশী-বিদেশী সহস্রাধিক পর্যটক ঘুরে বেড়ান।
অপর দিকে আরেক প্রকৃতি কন্যা পান্তুমাই বড়হীল ঝর্ণা দেখতে সকল বয়সের পর্যটকপ্রেমী লোক জন ভিড় জমান পান্তুমাই। বিশেষ করে উঠতি বয়সের তরুন তরুনীদের উপস্থিতি লক্ষনীয়।
তাছাড়া গোয়াইনঘাট উপজেলা রস্তমপুর ইউনয়নে দেশের বৃহত্তম পাথর কোয়ারী বিছনাকান্দি এলকায় পর্যটকদের উপস্থিতি লক্ষনীয়। সব মিলিয়ে সিলেটের গোয়াইনঘাট এখন পর্যটন নগরীতে রুপান্তরিত হয়ে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা যে ভাবে পর্যটন নগরী কে দেখা শোনা ও রক্ষনাবেক্ষন করছে ঠিক তেমনি ভাবে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা পেলে আরও উন্নতি লাভ করবে।
জাফলং পিকনিক রেষ্টুরেন্টে‘র প্রোপাইটার রাজিবুল ইসলাম শিমুল জানান, অন্যান্য বছরের ন্যায় এবার পর্যটকদের সংখ্যা বেশী, ব্যবসা মোটামুটি ভাল হচ্ছে । পর্যটকদের সেবা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় উপ-পরিচালক তাহমীনা খানম বলেন পান্তুমাই পর্যটন এলাকা দেখে অত্যন্ত ভাল লাগল। তবে দেশের অন্যান্য পর্যটন এরিয়ার চেয়ে পান্তুমাই র্স্পট অক্ষত রয়েছে। এখানে স্থানীয়রা এবং সরকারী ভাবে রক্ষনাবেক্ষন খুবই জরুরী।শিক্ষক সঞ্জয় নাথ সঞ্জু জানান পান্তুমাই ঝর্না দেখতে এসে খুব ভাল লাগল।

No comments:

Post a Comment