বাংলার ভূ-স্বর্গ পার্বত্য জেলা বান্দরবান। এখানে রয়েছে ১১টি ক্ষুদ্র
নৃ-গোষ্ঠী ও বাঙ্গালি সমপ্রদায়ের প্রায় চার লাখ মানুষের বসবাস। প্রকৃতি এ
এলাকাটিকে সাজিয়েছে আপন মনের মাধুরি মিশিয়ে। বান্দরবানের গাছ গাছালি ঘেরা
পাহাড়, নদী, হূদ, ঝর্ণার অমোঘ সৌন্দর্যের টানে সেখানে সারা বছর, বিশেষ
করে পুরো শীত মৌসুম জুড়ে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে। সেখানে
গড়ে উঠেছে সরকারি-বেসরকারি বেশকিছু পর্যটন স্পট, হোটেল, রেস্তোরাঁ, রয়েছে
পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থাসহ পর্যটকদের জন্য নানা সুযোগ-সুবিধা।
পর্যটকদের কাছে তাই অতি প্রিয় একটি নাম বান্দরবান।

মেঘলা পর্যটন কমপ্লে¬ক্সঃ বান্দরবান শহর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রের অবস্থান। এখানে বিশাল লেকের উপর আকর্ষণীয় দুটি ঝুলন্ত সেতু রয়েছে। চিত্ত বিনোদনের জন্য এখানে রয়েছে ক্যাবল কার, শিশু পার্ক, সাফারি পার্ক, চিড়িয়াখানা, স্পিড বোটে ভ্রমণের সুবিধা এবং থাকার জন্য রেষ্ট হাউজ। এছাড়াও কমপ্লে¬¬ক্সে ছোট্ট পরিসরে গড়ে তোলা চা বাগান মেঘলা পর্যটন স্পটের সৌন্দর্যে যোগ করেছে অন্যরকম মাত্রা। পর্যটকদের সুবিধার্থে নিচে নামতে রাস্তার পাশাপাশি তৈরি করা হয়েছে আকর্ষণীয় সিঁড়িও। নীলাচল পর্যটন কেন্দ্রটিও শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২২০০ ফুট উচ্চতায় পাহাড়ের চূড়ায় নীলাচল পর্যটন স্পটটি দেশি-বিদেশি পর্যটকদের অত্যন্ত পছন্দের স্থান। গাড়িতে ও পায়ে হেঁটেও সহজে নীলাচলে যাওয়া যায়। পর্যটকের সুবিধার জন্য নীলাচলে নির্মাণ করা হয়েছে আকর্ষণীয় কাঁচের টাওয়ার, দৃষ্টিনন্দন সিঁড়ি, গোলঘর এবং চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট। রাত যাপনের ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে। নীলাচল হতে খোলা চোখে অনায়াসে দেখা যায় চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদী। সন্ধ্যায় নীলাচল থেকে সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখা এক আনন্দময় অভিজ্ঞতা। মাইল নামকস্থানে প্রাকৃতিক এই ঝর্ণার অবস্থান। শহর থেকে শৈল প্রপাতে যেতে সময় লাগে ২০ থেকে ২৫ মিনিট। শৈল প্রপাত ঝর্ণার স্ফটিক স্বচ্ছ পানিতে গা ভেজাতে মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে।। রাস্তার পাশে শৈল প্রপাতের অবস্থান হওয়ায় এখানে পর্যটকদের ভিড় বেশি দেখা যায়। প্রায় ষোলশ' ফুট উচ্চতায় পাহাড়ের চূড়ায় স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন বৌদ্ধ স্বর্ণ মন্দির 'বুদ্ধ ধাতু স্বর্ণ জাদী'। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে এটি তীর্থ স্থান হলেও পর্যটকদের কাছেও যথেষ্ট আকর্ষণীয়। বান্দরবানে বসবাসরত ১১টি পাহাড়ী জনগোষ্ঠীসহ ১৪টি সমপ্রদায়ের লোকজনের কাছেও বুদ্ধ ধাতু স্বর্ণ জাদী অত্যন্ত পবিত্র স্থান। এটিকে উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বৌদ্ধমন্দির বলা হয়। এর নির্মাণশৈলী, কারুকার্য, স্বর্ণখচিত অবকাঠামো যে কারোরই মন কাড়ে। একশ তেইশটি সিঁড়ি ভেঙ্গে উঠতে হয় এই মন্দিরে। এখানে রয়েছে ছোট-বড় শতাধিক বৌদ্ধ মূর্তি। প্রতি বছর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে মন্দির এলাকায় বসে মেলা। বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে চিম্বুক পাহাড়ের অবস্থান। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে চিম্বুক পাহাড়ের উচ্চতা প্রায় ৩ হাজার দুইশ ফুট। চিম্বুক পাহাড়কে ঘিরেই পাহাড়ী মুরুং (ম্রো) জনগোষ্ঠীর বাস। ষ্টেশন ও টাওয়ার স্থাপন করেছে। পর্যটকদের দৃষ্টিতে এ টাওয়ার খুবই আকর্ষণীয়। এখান থেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত দেখা যায়। প্রাকৃতিক জলাশয় বগালেকঃ প্রাকৃতিক জলাশয় বগালেক সৃষ্টির পেছনে নানা কিংবদন্তী প্রচলিত রয়েছে। পাহাড়িরা এটিকে দেবতার লেক বলেও চেনে। পাহাড়ের উপরে শান বাঁধানো বেষ্টনিতে প্রায় ১৫ একর জায়গা জুড়ে বগালেকের অবস্থান। সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে প্রায় দু'তিনশ' ফুট উঁচু পাহাড়ে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট বগালেকটি বান্দরবানের রুমা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বর্ষা মৌসুমে বগালেকে যাতায়াত করা খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই সেখানে শীতে যাওয়াই ভালো। শুষ্ক মৌসুমে বগালেকে মোটর সাইকেল কিংবা জীপ গাড়িতে করেও যাওয়া যায়। বগালেক যেতে সাথে শুকনো খাবার, পানি, টর্চলাইট ও জরুরী ওষুধ সাথে রাখা দরকার। পর্যটকদের রাতযাপনের সুবিধার্থে বগালেকে জেলা পরিষদের রেষ্ট হাউজ এবং স্থানীয়ভাবে আরো দুটি গেস্ট হাউজ রয়েছে। প্রকৃতির অপূর্ব সৃষ্টি রুমা জলপ্রপাত। সব মৌসুমেই সচল রুমা জলপ্রপাতের স্বচ্ছ পানি ঝরে পড়ে সরাসরি নদীতে। নদীপথে রুমা থেকে থানছি যেতে রুমা জলপ্রপাতের (রিজুক ঝর্ণা) এ দৃশ্য চোখে পড়ে। রিজুক, রেমাক্রি ওয়াহ এবং তেছরী প্রপাত-এই তিন অপরূপা অরণ্য কন্যাকে দেখতে প্রতি বছর ভিড় করেন হাজার হাজার পর্যটক। রুমা থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকায় সহজেই জলপ্রপাত এবং ঝর্ণায় যাওয়া যায়।বান্দরবান পৌর শহরে অবস্থিত হোটেল থ্রি স্টার। এখানে রুম নয়, ফ্ল্যাট ভাড়া দেয়া হয়। প্রতিটি ফ্ল্যাটে ৮ থেকে ১৫ জন পর্যন্ত থাকার সুযোগ রয়েছে। নিজেরা রান্না করে খাওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে। থ্রি স্টারে থাকতে হলে পর্যটকদের প্রতিদিন গুনতে হবে ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। যোগাযোগ-০১৮১৩২৭৮৭৩১। সাঙ্গু নদীর পাশে জেলা শহরের মধ্যে প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে উঠেছে হোটেল রিভার ভিউ। এখানে নিজস্ব রেষ্টুরেন্টও রয়েছে। এখানে থাকতে হলে পর্যটকদের গুনতে হবে দেড় হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত।
No comments:
Post a Comment