
প্রায় ২০০ বছর আগে ১৭৮৯ সালে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূলের অদূরবর্তী সাগরদ্বীপ মহেশখালীর আয়তন ছিল মাত্র ১৮৮ বর্গকিলোমিটার। ১৮৮২ সালে দ্বীপটির ভূমির মোট আয়তন বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ২০৪ বর্গকিলোমিটারে। মাতারবাড়ী, ধলঘাটা ও সোনাদিয়া চর জেগে ওঠার ফলে দ্বীপের উত্তর ,দক্ষিণে ও পূর্বদিকে বড় হতে থাকে। একপর্যায়ে মহেশখালী দ্বীপাঞ্চল এলাকার আয়তন দাঁড়ায় প্রায় ৩৮৮ বর্গকিলোমিটার। মহেশখালী মূল দ্বীপ ও সংলগ্ন শাপলাপুরের নুনাছড়ি প্রায় ২০০ একর, কুতুবজোমে সোনাদিয়া ও ঘটিভাঙ্গা মৌজায় প্রায় ৯ হাজার একর, ধলঘাটার হাঁসেরদিয়া এলাকায় প্রায় ৯০০ একর, হোয়ানকের আমাবস্যখালী মৌজায় প্রায় পাঁচ হাজার একর, মাতারবাড়ী প্রায় ২০০ একরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রায় ২৫ হাজার একর বিতীর্ণ চরাঞ্চল জেগে উঠেছে।
আন্তর্জাতিক মহলে স্বীকৃত ইনডেক্স জার্নাল ‘ওরিয়েন্টাল জিওগ্রাফার’-এ প্রকাশিত ‘স্টাডিজ অন জিওমর্ফোলজিক্যাল এনভায়রনমেন্ট অব দ্য মহেশখালী আইল্যান্ড অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণামূলক নিবন্ধে দ্বীপ মহেশখালীর গঠনপ্রক্রিয়াগত বিবর্তন সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এতে বলা হয়, ২০০ বছর আগে ১৭৭৮ সালে মেজর রেনেলের মানচিত্রে মাতারবাড়ী চরের কোনো নাম-নিশানা ছিল না। সোনাদিয়া চরের আয়তন ছিল মাত্র ১ দশমিক ৫ বর্গকিলোমিটার।
১৮৯২ সালে ‘সার্ভে অব ইন্ডিয়ার’ মানচিত্রে মাতারবাড়ীর আয়তন দেখানো হয় ২৫ দশমিক ৪৫ বর্গকিলোমিটার এবং সোনাদিয়ার আয়তন ছিল মাত্র ১০ বর্গকিলোমিটার। ১৯৯৫ সালে নতুন দ্বীপ দু’টির আয়তন বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে প্রায় ৪০ বর্গকিলোমিটার এবং ৩১ দশমিক ০৫ বর্গকিলোমিটার। ওই গবেষণামূলক নিবন্ধে আরো বলা হয়, মহেশখালীর মূল ভূখন্ড বিগত ২০০ বছরে প্রায় ৪৪ শতাংশ বেড়েছে আর সমগ্র মহেশখালী বড় হয়েছে প্রায় ৬৩ দশমিক ৫ শতাংশ। গবেষণা সূত্র বলছে, ১৭৭৯ সালে মহেশখালী চ্যানেলের গড় গভীরতা যেখানে ১৫-৩৩ মিটার ছিল, তা ১৯৮৩ সালে কমে ৯-২০ মিটারে পৌঁছে। ১৯৯৯-২০০০ সময়কালে তা আরো কমে ৫-৮ থেকে ১০ মিটারে দাঁড়ায়। দ্বীপটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের চ্যানেলটি একেবারেই সঙ্কীর্ণ এবং অগভীর হয়ে পড়েছে। মহেশখালী ও সংলগ্ন প্রায় একীভূত অন্যান্য চরাঞ্চলের মোট ৩১০ বর্গকিলোমিটার ভূমির প্রায় ৫০ বর্গকিলোমিটার বা ২৬ শতাংশ পাহাড়ি ভূমি (আদিনাথ রেঞ্জ), ৩৩ বর্গকিলোমিটার বা ১১ শতাংশ প্যারাবন সমভূমি, ৬৪ বর্গকিলোমিটার বা প্রায় ২১ শতাংশ অঞ্চল নবগঠিত উপকূলীয় জোয়ার-ভাটা প্রভাবিত প্যারাবন ভূমি বা ম্যানগ্রোভ জোয়ার-ভাটাজাত সমভূমি এবং প্রায় ৮১ বর্গকিলোমিটার বা ২৬ শতাংশ অঞ্চল সক্রিয় জোয়ার-ভাটাজাত প্যারাবন সমভূমি। দ্বীপটিতে বর্তমানে প্রায় ৬০ বর্গকিলোমিটার বা ২০ শতাংশ নতুন জেগে ওঠা কর্দমভূমি, বালুকা বেলাভূমি এবং অগভীর মগ্নচড়া গড়ে উঠেছে।
সচেতন মহলের অভিমত যে ভাবে সাগরে পলি জমে দ্বীপের আয়তন বৃদ্ধিপাচ্ছে, তাতে করে আগামী ৫/১০ বছরের মধ্যে ককসবাজারের মূল ভুখন্ডের সাথে মহেশখালী দ্বীপের সংযুক্ত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে মহেশখালী দ্বীপের বাসিন্দাদের আবেদন যে ভাবে সাগরে পলি জমে আয়তন বৃদ্ধি পেয়ে জেটিঘাট এলাকা ভরাট হয়ে যাত্রি পারাপারে চরম দূর্ভোগের কবলে পড়েছে ও ভরাট হওয়া জেটিঘাট দিয়ে যাত্রী পারাপার সহজ করতে জেটিবাড়ানোর দাবী জানিয়েছেন মহেশখালীবাসি।
ছবিরক্যাপশন:ইনসেটে ভাটার সময় মহেশখালীর গোরকঘাট জেটিঘাট দিয়ে হাটুপরিমান পলি কাঁদা মিশ্রিত পানি পাড়ি দিয়ে যাত্রী পারাপারের দৃশ্য।
info: http://www.banglapost24.com/মহেশখালী-দ্বীপের-আয়তন-বে
No comments:
Post a Comment