বঙ্গোপসাগরের উপকূল ঘেঁষে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট বা
শ্বাসমূলীয় বন সুন্দরবন৷ বাংলাদেশ ও ভারতজুড়ে বিস্তৃত এ বনের মোট আয়তন
প্রায় ১০,০০০ বর্গকিলোমিটার৷বাংলাদেশে সুন্দরবনের আয়তন প্রায় ৬০১৭ কিলোমিটার৷ আয়তনের প্রায় ৭০ ভাগ স্থল
আর ৩০ ভাগ জল৷ পুরো সুন্দরবনের ভেতরে জালের মতো অসংখ্য নদী আর খাল রয়েছে৷
জীববৈচিত্রে ভরপুর সুন্দরবনকে ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায়
অন্তর্ভুক্ত করা হয়৷ প্রায় ৪০০ প্রজাতির পাখির বসবাস এই বনে৷
শেলা নদীতে ডুবে যাওয়া তেলবাহী ট্যাংকার ‘ওটি সাউদার্ন স্টার ৭'-কে
দুর্ঘটনার দু'দিন পর উদ্ধার করা হয়েছে৷ কিন্তু ট্যাংকার থেকে ৭০ কিলোমিটার
এলাকায় তেল ছড়িয়ে পড়ায় সুন্দরবনের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য পড়েছে চরম হুমকির
মুখে৷পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের শেলা নদীতে মঙ্গলবার ভোরে মালবাহী
জাহাজের ধাক্কায় তেলসহ ‘ওটি সাউদার্ন স্টার সেভেন' নামে একটি তেলবাহী
ট্যাংকার ডুবে যায়৷ দুর্ঘটনা কবলিত ওই তেলবাহী ট্যাংকার থেকে আশেপাশের প্রায় ৭০ কিলোমিটার অঞ্চলে তেল ছড়িয়ে পড়ে৷
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ‘ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট’ বা শ্বাসমূলীয় বন সুন্দরবন৷ এই বনের
প্রধান গাছটির নাম সুন্দরী৷ আর তার থেকেই সুন্দরবনের নামকরণ৷ ঋতুতে ঋতুতে এ
বনের চরিত্র বদলায়৷ তবে সুন্দরবন সবচেয়ে বেশি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে
বর্ষাকালে৷বঙ্গোপসাগরের উপকূল ঘেঁষে সুন্দরবনে বর্ষা আসে মে মাসে আর সেই বর্ষাকাল চলে
সেপ্টেম্বর পর্যন্ত৷ অবশ্য জুন মাসের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যভাগ
পর্যন্ত এখানে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়৷ সুন্দরবন অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের
পরিমাণ ১৬৪০-২০০০ মিমি৷ তবে বনের পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে বৃষ্টিপাত
তুলনামূলকভাবে বেশি৷
বৃহস্পতিবার দুপুরে ট্যাংকারটি উদ্ধার করা হয়েছে৷ ট্যাংকারটি গোপালগঞ্জের
একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য খুলনার পদ্মা অয়েল ডিপো থেকে ৩ লাখ ৫৭ হাজার
৬৬৪ লিটার ফার্নেস অয়েল নিয়ে যাচ্ছিল৷ এ ঘটনায় ট্যাংকারের মাস্টার মোকলেসুর
রহমান এখনো নিখোঁজ রয়েছেন৷
ট্যাংকার ফেটে ডুবে যাওয়ার কারণে তেল পানিতে ছড়িয়ে পড়ায়, মারাত্মক হুমকিতে পড়েছে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য৷
বিশেষ করে ইরাবতী ডলফিন অধ্যুষিত এলাকায় এখন ডলফিনের বিচরণ দেখা যাচ্ছে
না৷ এছাড়া জোয়ারে তেলযুক্ত পানি বনে প্রবেশ করায় গাছের গোড়ায় ও শ্বাসমূলে
তেলের আবরণ লেগে তা ক্ষতির মুখে পড়ছে৷নৌ-মন্ত্রী শাজাহান খান অবশ্য জানিয়েছেন, পানির ওপর থেকে তেল দূর করতে
উদ্ধারকারী জাহাজ কাণ্ডারী-১০ থেকে রাসায়নিক ছিটানো হবে৷ এতে ভেসে থাকা তেল
পানির নীচে চলে যাবে এবং পানির অক্সিজেন নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা কমবে৷ এছাড়া
বন্দর কর্তৃপক্ষের হার্বার মাস্টার আকতারুজ্জামান জানান, দ্রুতই তেল
অপসারণের কাজ শুরু হবে৷
ট্যাংকার দুর্ঘটনায় তেল নিঃসরণের পর সুন্দরবনে শেলা নদী রুটে সব ধরনের
নৌ-যান চলাচল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে সরকার৷ নৌ-মন্ত্রণালয় জানায়, এক
জরুরি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত শেলা নদী
রুটে সব ধরনের নৌ-যান চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷
ওদিকে, তেল ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় দুই জাহাজ মালিকের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মামলা করেছে বনবিভাগ৷
No comments:
Post a Comment