বল কোর্টের বাইরে পড়া দেখেই র্যাকেট ছেড়ে
শুয়ে পড়লেন কারবার। কিছুক্ষণ থাকার পর উঠে দাঁড়ালেন। চোখ ভেজা। অশ্রুসজল
চোখেই হাসছেন। এ যে আনন্দাশ্রু। কাঁদতে কাঁদতেই জড়িয়ে ধরলে সেরেনা
উইলিয়ামসকে। কারবারকে অভিনন্দন জানালেন মার্কিন কৃষ্ণকলি। ততক্ষণে যে
ইতিহাস হয়ে গেছে। প্রথমবারের মতো টেনিসের কোন গ্রান্ডস্লামের ফাইনালে উঠেই
শিরোপা জিতলেন জার্মানির অ্যাঞ্জেলিক কারবার। তাও আবার পাওয়ার টেনিসের
অন্যতম প্রবক্তা সেরেনা উইলিয়ামসকে হারিয়ে। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে নতুন দিগন্ত
সূচনা করলেন কারবার। ব্রাভো।
জিতলেই নতুন রেকর্ড হতো সেরেনা উইলিয়ামসের।
উন্মক্ত যুগে স্পর্শ করতেন স্টেফিগ্রাফের ২২তম গ্রান্ডস্লামের রেকর্ড।
কিন্তু তা আর হলো না। উল্টো হেরে বসলেন জার্মানির অ্যাঞ্জেলিক কারবারের
সঙ্গে। ম্যাচটি মোটেই একপেশে ছিল না। ফাইনাল হয়েছে ফাইনালের মতোই। প্রতিটি
সার্ভ আর শটেই হয়েছে আগুনে লড়াই। শেষ পর্যন্ত বিজয়ীর হাসি কারবারের
চোখেমুখেই। ৬-৪, ৩-৬, ৬-৪ সেটে সেরেনাকে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের শিরোপা
জেতেন জার্মান তরুণী।
শক্তি সামথ্যে পার্থক্য ছিল অনেক। সেরেনা
নেমেছিলেন ক্যারিয়ারের ২২তম রেকর্ড গ্রান্ডস্লাম জয়ের জন্য। আর সেখানে
কারবারের লক্ষ্য ছিল ক্যারিয়ারের প্রথম গ্রান্ডস্লাম ট্রফি। অভিজ্ঞতারও ছিল
বড় তফাৎ। ছিল ফাইনাল ম্যাচের সীমাহীন চাপ। তবে ফাইনালের আগে কারবার
বলেছিলেন, সামনে রেকর্ড বলেই চাপে থাকবে সেরেনা, যা তার জন্য সুবিধারই হবে।
শেষ পর্যন্ত তাই হলো। কিন্তু শিরোপা জিততে কি পরিমাণ ঘাম ঝড়াতে হয়েছে
কারবারকে, তা দেখেছে সবাই। প্রতিটি সেটই হয়েছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই।
প্রথম সেট থেকেই উজ্জীবিত ছিলেন ২৮ বছর বয়সী
জার্মান সুন্দরী কারবার। বেশ দাপট দেখিয়েই জেতেন ৬-৪ গেমে। গত আসরের
চ্যাম্পিয়ন ও অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ছয়বারের শিরোপাধারী সেরেনা তখন ম্যাচে
ফিরতে মরিয়া। দ্বিতীয় সেটটা তাই জিতলেন লড়াই করে। ব্যবধান ৬-৩। তৃতীয় সেটটি
তাই হয়ে দাঁড়ালো শিরোপা নির্ধারণী সেট। ২-০তে লিড নিলেন কারবার। পরের গেম
জিতে ব্যবধান ২-১ করলেন সেরেনা। পরের গেম জিতে ২-২ এ সমতা এনে সেরেনা জানান
দিচ্ছিল জিতবেন তিনিই।
কিন্তু পরের তিনটি গেমেই অবিশ্বাস্যভাবে
জিতে যান কারবার। ব্যবধান দাঁড়ায় ৫-২ এ। এমন অবস্থায় সেরেনা হারতে চলেছেন,
সবার ধারণা ছিল তেমনই। কিন্তু অদম্য সেরেনা শেষ পর্যন্ত লড়ে যান। ব্যবধান
কমিয়ে আনেন ৫-৪এ। কিন্তু শেষ ধাক্কাটা দিয়েছেন কারবার। ম্যাচ টাইব্রেকারে
যেতে দেননি তিনি। জিতে যান ৬-৪ গেমে। দুই ঘন্টা আট মিনিটের রুদ্ধশ্বাস
লড়াইয়ে অসাধ্য সাধন করেন ক্যারিয়ারে মাত্র সাতটি ডব্লিউটিএ শিরোপা জেতা
অ্যাঞ্জেলিক কারবার।
অল্পের জন্য স্টেফি গ্রাফের রেকর্ড স্পর্শ
করতে পারেননি সেরেনা। তাতে হতাশা থাকলেও অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের নতুন রাণী
কারবারকে অভিনন্দন জানাতে ভোলেননি সেরেনা। তিনি বলেন, ‘আজকের রাতের জন্য
সবাকেই ধন্যবাদ। এটা ছিল দারুণ একটি ম্যাচ। অ্যাঞ্জি, তোমাকে অভিনন্দন।
তুমিই করেছে। তুমি আসলেই এই ট্রফির জন্য যোগ্য ছিলেন। আশা করি এই মুহূর্ত
তুমি উপভোগ করছ। আমি ধন্যবাদ জানাই আমার টিমকে। এবং অবশ্যই দর্শককে। আমি
সত্যিই উপভোগ করেছি নিজেকে। সবাইকে ধন্যবাদ’।
সেরেনার অভিনন্দনের জবাব কারবার দিলেন
সেরেনাকে দিয়েই। কারবার বলেন, ‘সেরেনা, তুমি অনুপ্রেরণাদায়ক এবং অবিশ্বাস্য
ব্যক্তিত্বের অধিকারী। সুতরাং তোমাকেও অভিনন্দন, এতোদিনে যা করেছে তুমি।’
অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের শুরুর দিকের ম্যাচ
প্রসঙ্গে কারবার বলেন, ‘প্রথম রাউন্ডেই প্রায় বাদ পড়ে যাচ্ছিলাম। আমার এক
পা জার্মানি যাওয়ার জন্য প্লেনে ছিল প্রায়। তবে সুযোগ পেয়ে যাই। শেষ
পর্যন্ত ট্রফিটাই জিতে গেলাম। আমার স্বপ্ন পূরুণ হলো। গোটা ক্যারিয়ারে আমি
অনেক পরিশ্রম করেছি। আর তাই এখানে আমি। এখন আমি বলতেই পারি, আমি
গ্রান্ডস্লাম চ্যাম্পিয়ন। আমার সেরা একটা পরিবার আছে। সেরা টিম। আমি খুবই
উপভোগ করছি এই মুহূর্ত। সবাইকে ধন্যবাদ। গত দুটি সপ্তাহ ছিল আমার জীবন ও
ক্যারিয়ারে সেরা সময়। দেখা হবে আগামী বছর’।
আগের পাঁচবারের মোকাবেলায় সেরেনার সঙ্গে
সবকটিতেই হেরেছিলেন কারবার। এবার অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালে ষষ্ঠবারের
দেখায় শোধটা ভালোই তুললেন অ্যাঞ্জেলিক কারবার।
Info: http://www.banglamail24.com/news/130851